সিলেট নগরীতে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কারের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) নামে এক পরিবহন শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিলেটে চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। এই সড়কের চৌহাট্টা- দরগাহ এলাকার ফুটপাত ও সড়কের অনেকাংশ দখল করে অনেকদিন ধরেই অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার শ্রমিকরা। প্রতিদিন এখানে শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা থাকে। চারদিন আগে এই অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে যায় সিলেট সিটি করপোরেশন। মেয়রের নেতৃত্বে এই অভিযানে বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাদের তিনদনের সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা বাধা দেয়। খবর পেয়ে দুপুরে মেয়র, কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তখনও পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রাখে। এ সময় মেয়রসহ সিসিকের কর্মকর্তারা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা বাধা দেন। এনিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।
পরিবহন শ্রমিকদের হামলার পর পর সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশের উপরও হামলা চালায় শ্রমিকরা। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিবহনশ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে অন্তত ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দুই দফা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় মেয়র ও কাউন্সিলদের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে কার-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের চৌহাট্টা শাখার সভাপতি অরুণ দেবনাথ বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় আমাদের ৫ কর্মী আহত হয়েছেন। পরে সিটির কর্মীরাই অনেকগুলো গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে তিনি দাবি করেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় স্ট্যান্ড করে আছি। উচ্ছেদের আগে আমাদের বিকল্প একটি জায়গা প্রদানের জন্য মেয়রের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তি তিনি তা না শুনে আজ দলবল নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা করেন ও গাড়ি ভাংচুর করেন।
এদিকে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের আগে বিকল্প স্ট্যান্ড করার জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়াসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। আগামী রোববারের মধ্যে তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাতে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় তিনটি দাবি তুলে ধর্মঘটের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের তিনটি দাবি হচ্ছে চৌহাট্টা থেকে উচ্ছেদের আগে বিকল্প স্থানে স্ট্যান্ডের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া, ভাঙচুর করা গাড়ির ক্ষতিপূরণ ও আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
হামলা করে আবার ধর্মঘট আহ্বান কেন—তা জানতে চাইলে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজি ময়নুল ইসলাম দাবি করেন, স্ট্যান্ড উচ্ছেদের নামে তাদের ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙা ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাদের সাত থেকে আটজন শ্রমিক। এ জন্য সর্বসম্মতভাবে তিনটি দাবি আদায় করে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে পরিবহনশ্রমিকরা বেপরোয়া আচরণ করছে। স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে তাদের অনুরোধ করার পরও তারা যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা চরম ধৃষ্টতা। তারা বন্দুক দিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে উদ্যত হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক পরিবহন খাতের মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের দাপটের কাছে সরকার অনেক সময় নির্লিপ্ত ভূমিকার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এই খাতে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়ক পরিবহণ খাতটি এর মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় অরাজকতা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ