দেশের এমন কোনো দপ্তর কিংবা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আসে। যেসব দপ্তর কিংবা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ থেকে এখনো মুক্ত বলে মনে হয়, সেখানেও আড়ালে চলে এসব অপকর্ম। কটার সংবাদই আর আসে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের অনিয়ম আর দুর্নীতির এক-চতুর্থাংশই সংবাদে আসে। তারা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্রটি আমাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে। সম্প্রতি বরিশালের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এলে এই মোদ্দা সামনে আসে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি বিদ্যালয় তহবিলের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তরা কাছে দরখাস্ত করেছেন এক অভিভাবক।
প্রধান শিক্ষকের নাম সুলতান আহমেদ। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন মোয়াজ্জেম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৭ বছর মোয়াজ্জেম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৪ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ , বিধি অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে (সহকারী প্রধান শিক্ষক) ছুটির আদেশ দেখিয়ে পছন্দের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় সুলতান আহমেদ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। তিনি অর্ধকোটি টাকা অত্মসাৎ করেছেন। কোনোভাবে যেন দুর্নীতি ফাঁস হয়ে না যেতে পারে এ জন্যই পছন্দের শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
করোনা কালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনের সঙ্গে আনুষঙ্গিক চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে সুলতান আহমদের বিরুদ্ধে। অবসরে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব, খরচ ভাউচার, নগদ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত টাকা, বিদ্যালয়ের জমির দলিল, স্টল ভাড়ার ডিডসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট হস্তান্তর করেননি। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ দেখাশোনার দায়িত্বের অজুহাত দেখিয়ে বর্তমান এডহক কমিটির কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার একটি ভাউচার পাশ করান সুলতান আহমেদ।
শায়েস্তাবদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য কবির হোসেন তালুকদার জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিজনের কাছ থেকে তিনি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। স্কুলের কোনো টাকা আমি গ্রহণ করিনি। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এমনটা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি দেশ ও জাতীর জন্য যেমন কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত, প্রতিষ্ঠানটি তেমনি সংবেদনশীল। এখানেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বেড়ে ওঠার শিক্ষা দেওয়া হয়। যারা এক সময় দেশ ও জাতীর হাল ধরবেন। দেশকে নিয়ে যাবেন আরও উন্নত কোনো স্বপ্নের দিকে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যখন বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়, তখন শিক্ষার বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। আর এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির সাথে যখন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ে তখন তারা পরবর্তী প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিচ্ছেন আর কেমন করে বেড়ে উঠাতে তারা ভূমিকা রাখছেন, চিত্রটা সহজেই স্পষ্ট হয়ে আসে। দেশের বর্তমান সামগ্রিক এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আর রাষ্ট্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার পেছনে এসব দুর্নীতিবাজ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া শিক্ষকদের ভূমিকাই শীর্ষস্থানীয় বলে মনে করেন তারা। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৭০৭
আপনার মতামত জানানঃ