বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন না, তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকার নিবন্ধনে সহায়তা করবেন। এখন করোনার সম্মুখসারির ১৮ ক্যাটাগরির মানুষ এবং ৫৫ বছরের উপরের সাধারণ মানুষ নিবন্ধন করতে পারবেন। টিকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রেও নিবন্ধন করা যাবে। ওখানে আইটি’র লোক টিকা নিতে আগ্রহীকে সহায়তা দেবেন। অনলাইনে টিকার নিবন্ধনে ধীরগতির কারণে এ কার্যক্রম সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৯৪ হাজারের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন। সুরক্ষা ওয়েবসাইটে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৪ঠা ফেব্রুয়ারির মধ্যে টিকার নিবন্ধনের জন্য তৈরি করা অ্যাপসটি মোবাইলে পাওয়া যাবে। তখন মানুষ সহজে আরো বেশি নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে আইসিটি বিভাগ বলছে, অ্যাপসটির জন্য গুগলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তা গুগল রিভিউ স্ট্যাটাসে রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেছেন, অনেকে হয়তো ঠিকমতো অনলাইনে টিকা নেয়ার আবেদন করতে পারছেন না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন বিভিন্ন টিকার কার্যক্রমে বা স্বাস্থ্য সেবা দিতে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন, তারা এদের টিকার নিবন্ধন করতে সহায়তা করবেন। তিনি জানান, এর বাইরে গ্রাম বা ইউনিয়নের তথ্য কেন্দ্রে যারা কাজ করেন, তারাও টিকার নিবন্ধনে সহায়তা করবেন।
বাংলাদেশে গত ২৭শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৭টি ক্যাটেগরির পেশার মানুষের বাইরে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিরা টিকা নিতে পারবেন। এ জন্য https://www.surokkha.gov.bd/ নামের ওয়েবসাইটে টিকা নিতে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং একটি মোবাইল নম্বর লাগবে।
নিবন্ধন ছাড়া কেউ ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে পারবে না, এই সিদ্ধান্ত এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই পর্যায়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেত কী-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সংবাদকে বলেন, নিবন্ধন কোন কঠিন কাজ ছিল না, এটিকে কঠিন করা হয়েছে। মূল কাজ হলো- যিনি টিকা নিতে চান, তার তথ্য চাওয়া বা রাখা। বিকল্প হিসেবে প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে একজন বা দু’জন লোক রাখা হলেই এ কাজটি সহজে করা যায়।
দু’একদিনের মধ্যে টিকার নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া মিলবে-আশাবাদ ব্যক্ত করে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশেই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করা হবে। গণমাধ্যমে প্রচার ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
দেশে ২৭শে জানুয়ারি করোনা ভ্যাকসিন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন টিকার জন্য নিবন্ধনের সুরক্ষা ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হয়। ইতিমধ্যে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। টিকা নিয়েছেন, এমন একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, টিকা নেওয়ার দিন রাতে তার জ্বর এসেছিল। এক দিন জ্বর ছিল। এখন তিনি সুস্থ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী টিকাদান প্রক্রিয়া ছয় ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথমে এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন। অনলাইন পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ। এরপর ভ্যাকসিন দেয়ার তারিখ ও তথ্য পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবে এবং প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম থেকে ভ্যাকসিন সনদ দেয়া হবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দৈনিক রোগী শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৯৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাতে দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশে মোট রোগীর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৫ জন। রোগী শনাক্তের সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, টানা ১৫ দিন এটা পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা তিন শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, টানা একমাস যদি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে সেই দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর জন্য যেভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশে তেমন কিছুই করা হয়নি। এর দুইটি কারণ থাকতে পারে। হয়তো তাপমাত্রা এটা কমাতে সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের যে ধরনটা বাংলাদেশে রয়েছে, সেটা হয়তো ততো বেশি সংক্রামক নয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই নিজে নিজে ওয়েবসাইট কিংবা ‘অ্যাপে’ গিয়ে নিবন্ধন করা সম্ভব হবে না। লোকজন কীভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করবে? বয়স্ক নাগরিকরা কি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে নিবন্ধন করতে পারবে? এসব বিষয় ভাবা হলো না কেন? তবে এখন তারা বুঝতে পারছে, কিছু উদ্যোগও নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা টিকাকেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করছে। এটি না হলে টিকাদান কার্যক্রম সফল হবে না। তাছাড়া দেশে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। এই কারণে হয়তো অনেকে মনে করতে পারেন যে, তার আর করোনা হবে না। এই জন্যে টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে সবাইকে টিকা নেয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৩
আপনার মতামত জানানঃ