করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ও স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক সূচকেও বড় ধরনের অধপতন হয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। করোনা মহামারীর মধ্যে সূচকে বড় সংখ্যক দেশের গণতান্ত্রিক পরিসরের যেখানে অবনতি ঘটেছে, সেখানে বাংলাদেশে তা এগিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালের গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ উন্নতি হয়েছে। ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা ইআইইউর প্রতিবেদন এমন তথ্য দিয়েছে।
পাঁচটি মানদণ্ডে একটি দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ বুধবার(০৩ ফেব্রু) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ এবার রয়েছে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে।
গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৮৮; আট ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ৮০তম অবস্থানে। তার আগের বছর ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ তালিকার ৮৮তম অবস্থানে ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতন্ত্রের দশার এই অবনমনের পেছনে মহামারীর মধ্যে দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি বড় ভূমিকা রেখেছে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, গণতন্ত্রের জন্য এই বাজে বছরেও বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তানসহ এশিয়ার কিছু দেশের স্কোরে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ রয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে, যার একটি বড় অংশ চীনের বাসিন্দা।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচ মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
সূচকে দেশগুলোকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেসব দেশের স্কোর ৮-এর বেশি তারা রয়েছে ‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার’ বিভাগে। যেগুলোর স্কোর ৬-এর বেশি এবং ৮ বা এর কম, সেগুলো ‘ত্রুটিযুক্ত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’, যেগুলোর স্কোর ৪-এর বেশি এবং ৬ বা এর কম, সেগুলো ‘হাইব্রিড গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’ এবং যেসব দেশের স্কোর ৪ বা এর নিচে, সেসব ‘কর্তৃত্ববাদী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার’ অধীন।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে তাদের ভাষায় ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল মাত্র ২৩টি দেশে, যা আগের বছরের চেয়ে একটি বেশি। ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে এমন দেশের সংখ্যা আগের বছর থেকে দুটি কমে ৫২টি হয়েছে। আর ‘মিশ্র শাসনে’ আছে এমন দেশ ৩৭টি থেকে কমে ৩৫টি হয়েছে। তাদের বিচারে বর্তমান বিশ্বে ৫৭টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীনে রয়েছে; এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিনটি বেশি। এবারের সূচক বলছে, গণতন্ত্রের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত। ৬ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে তালিকার ৫৩ নম্বরে।
এরপর ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৮ তম; ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৬ তম; ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮৪ তম; ৫ দশমিক ২২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯২তম; ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১০৫তম; ৩ দশমিক ০৪ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১৩৫তম এবং ২ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।
এবারের তালিকায় প্রথম পাঁচটি দেশ: নরওয়ে (৯.৮১), আইসল্যান্ড (৯.৩৭), সুইডেন (৯.২৬), নিউজিল্যান্ড (৯.২৫) এবং কানাডা (৯.২৪)।
শেষ পাঁচটি দেশ: শাদ (১.৫৫), সিরিয়া (১.৪৩), সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (১.৩২), রিপাবলিক অব কঙ্গো (১.১৩), নর্থ কোরিয়া (১.০৩)।
সূচকে গত তিন বছর টানা অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের অবস্থান এখনো ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ বিভাগেই রয়েছে। তবে এর আগে ২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশের বড় অবনতি হয়েছিল। পিছিয়ে গিয়েছিল আট ধাপ। সেবার ১৬৫টি দেশ ও দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয় ৯২তম। অর্থাৎ তার আগের বছর ২০১৬ সালের সূচকে বাংলাদেশ ছিল ৮৪তম।
‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থা বলতে এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। বিরোধী দল ও বিরোধী প্রার্থীদের ওপর সরকারের চাপ নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ ছাড়া দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দুর্বল আইনের শাসন; নাগরিক সমাজও দুর্বল। আর বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপ দেওয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৬
আপনার মতামত জানানঃ