গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সোমবার সকালে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত আনার অভিযোগ তোলে লেখক ও পল্লী চিকিৎসকের লাশ অবরোধ রেখে দাফনে বাধা প্রদান করেছে কয়েকজন ফতোয়াবাজ। তাদের দাবি মৃত. ডা. জয়নাল আবদীন জীবিত থাকাকালে নিজের লেখা ‘আমি মিকাইল বলছি’ বইতে এবং বিভিন্ন সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। তাই তার লাশ কবরস্থানে দাফন করা যাবে না বলে জানান তারা।
ডা. জয়নাল আবেদীন (৬১), উপজেলার মহরাবহ এালাকার মৃত. বরকত আলীর ছেলে। ডা. জয়নাল আবেদীন একাধারে লেখক, কলামিস্ট, মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসক ছিলেন। নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, লেখক ও পল্লী চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার বিকেলে তিনি তার নিজ গ্রাম মরকাবহে মৃত্যুবরণ করেন।
পরে সোমবার সকাল ১১টায় তার নামাজে জানাযার সময় নির্ধারণ করেন গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা। নিধার্রিত সময়ে পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা তাদের যৌথ কবরস্থান মহরাবহ পাঁচ গ্রাম কবরস্থানে নিয়ে যান। এ সময় মহরাবহ জামে মসজিদের ইমাম ফতোয়াবাজ ইব্রাহীম ও স্থানীয় মাতাব্বর আলী হোসেনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন স্থানীয় যুবক ও মাদ্রাসা ছাত্র সেখানে হাজির হন। পরে তারা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত আনার অভিযোগ তোলে তার লাশ অবরোধ করে রাখে এবং তার লাশ দাফনে বাধা দেন। এসময় অবরোধ রেখে তার লাশ দাফনে বাধাকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে মরহুমের জানাযার নামাজ শেষে ওই কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনার পর নিহতের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
লাশ দাফনে বাধা প্রদানকারী মহরাবহ জামে মসজিদের ইমাম ইব্রাহীম আলিদ ও আলী হোসেন বলেন, জীবিত অবস্থায় সে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা-বার্তা বলেছে। এ কারণে তার লাশ এ কবরস্থানে দাফন করতে বাধা দেয়া হয়েছে।
মরহুমের ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা অতীতে জলবায়ু বিষয়ক একটি বই লিখেন। এরপর ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগ তোলে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। এ কারণে আমরা আতঙ্কের মধ্যে কোন রকমে দিন অতিবাহিত করলেও বাবার লাশ দাফনে বাধার ঘটনার পর থেকে আরো বেশি আতঙ্কে পড়েছি।
স্থায়ীয় ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন জানান, নিহতের বাড়ি গিয়ে ওই কবরস্থানে লাশ দাফন করতে বলেছিলাম, কবরের জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কয়েকজন হুজুর, মাদ্রাসা ছাত্র ও যুবক করবস্থানে গিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেয়। পরে তাদের বুঝিয়ে তার লাশ ওই কবরস্থানেই রাখা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমিত্র জানান, খবর পেয়ে ওই কবরস্থানে গিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। পরে জানাযা শেষে ওই কবরস্থানে তার লাশ দাফন সম্পূর্ণ করা হয়।
কালিয়াকৈর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব রানা জানান, সরকার নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ফতোয়া দেওয়ার জন্য একটি বোর্ড রয়েছে। তারাই শুধু ফতোয়া দিতে পারে। কিন্তু এলাকার কোন ব্যক্তি এভাবে একজন সমাজসেবক বিশিষ্ট লেখকের নামাজে জানাযায় গিয়ে ফতোয়া জারি করে দাফনে বাধা দিতে পাড়েন না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২৩৫১
আপনার মতামত জানানঃ