চীন নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারকে দ্রুত আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করছে। শিকাগোভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস–এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চীনের হাতে প্রায় ৬০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তির তুলনায় দ্রুতগতিতে বাড়ছে। শুধু তাই নয়, দেশটি প্রায় ৩৫০টির মতো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো তৈরি করছে, যেগুলো ভূগর্ভস্থ স্থায়ী উৎক্ষেপণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমান ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ঘাঁটি তৈরি করছে, যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব, ফলে শত্রুপক্ষের পক্ষে এগুলোকে টার্গেট করা কঠিন হয়ে পড়ে।
চীনের সেনাবাহিনী, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), বর্তমানে প্রায় ৭১২টি স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এর সবগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম নয়। এদের মধ্যে প্রায় ৪৬২টি ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে। একই সঙ্গে চীনের হাতে রয়েছে টাইপ ০৯৪এ জিন-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন, যেগুলো সমুদ্র থেকে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম। এ ছাড়া চীন তাদের আকাশভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ও আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) শক্তিও দ্রুত বাড়াচ্ছে। লক্ষ্য হলো একটি বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী পারমাণবিক ভান্ডার গড়ে তোলা, যেখানে থাকবে স্বল্পপাল্লা থেকে শুরু করে মাল্টি-মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত।
নীতিগতভাবে চীন দীর্ঘদিন ধরে “No First Use” বা “প্রথমে ব্যবহার নয়” অবস্থান বজায় রাখছে। তাদের ঘোষণায় বলা হয়েছে, তারা কখনোই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো হামলা চালাবে না কিংবা এমন হুমকিও দেবে না। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, পারমাণবিক যুদ্ধে কোনো পক্ষই জিততে পারে না, তাই এমন যুদ্ধ শুরু করাই উচিত নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই ঘোষণার পেছনে কৌশলগত দ্ব্যর্থ থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রচলিত হামলায় চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়ে, অথবা যদি তাইওয়ান ইস্যুতে প্রচলিত সামরিক যুদ্ধে পরাজয় সরকারকে টিকে থাকার ঝুঁকিতে ফেলে, তবে সেই পরিস্থিতিতে চীন প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
চীনের এই অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধির এই গতি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় নতুন জটিলতা তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলবিদরা মনে করেন, চীন ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ানকে দখলের জন্য সামরিকভাবে প্রস্তুত থাকার যে নির্দেশ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেনাবাহিনীকে দিয়েছেন, সেটিই অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান প্রণোদনা। অন্যদিকে চীন বারবার বলছে, তাদের পারমাণবিক কৌশল সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক এবং কোনো ধরনের আগ্রাসনের জন্য নয়।
আপনার মতামত জানানঃ