মহাকাশ সবসময়ই মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা সাধারণভাবে মনে করি মহাকাশ একেবারে শূন্য ও বৈশিষ্ট্যহীন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য ও রহস্য উন্মোচন করে আমাদের সেই ধারণাকে বদলে দিচ্ছেন। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এবার খুঁজে পেয়েছেন মহাকাশজুড়ে বিস্তৃত এক বিশাল আন্তনাক্ষত্রিক সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা। এই আবিষ্কার শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ই নয়, বরং আমাদের সৌরজগতের অবস্থান ও গঠন সম্পর্কেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সৌরজগত এক বিশেষ অঞ্চলে অবস্থান করছে, যা পরিচিত “গরম বুদ্বুদ” নামে। এখানে ঘনত্ব খুবই কম এবং ধারণা করা হয়, এক থেকে দুই কোটি বছর আগে মৃত নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে এই অঞ্চল তৈরি হয়েছে। বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট প্লাজমার তরঙ্গ চারপাশের গ্যাস ও ধূলিকণাকে সরিয়ে দেয় এবং একটি বিশাল গহ্বর তৈরি করে। এই গহ্বরই এখন মহাকাশ গবেষণার অন্যতম রহস্যঘেরা ক্ষেত্র
২০১৯ সালে উৎক্ষেপণকৃত ইরোসিটা এক্স-রে টেলিস্কোপ মহাকাশের হাজার হাজার তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান সৌরজগত থেকে শুরু হওয়া সুড়ঙ্গগুলো। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩০০ আলোকবর্ষব্যাপী বিস্তৃত অঞ্চল থেকে দুটি বিশাল সুড়ঙ্গ প্রসারিত হয়েছে—একটি সেন্টোরাস নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে, অন্যটি ক্যানিস মেজর নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চ্যানেলগুলো বৃহত্তর নক্ষত্র তৈরির অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত
বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে প্রায় দুই হাজার ভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যালাকটিক উত্তর অংশ তুলনামূলকভাবে শীতল, আর গ্যালাকটিক দক্ষিণ বেশি উত্তপ্ত। গরম বুদ্বুদ যে গ্যালাকটিক ডিস্ক থেকে দূরে প্রসারিত হচ্ছে, সেই কারণেই এ ভিন্নতা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্রেইবার্গের মতে, আগে জানা যায়নি যে সেন্টোরাস নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে একটি আন্তনাক্ষত্রিক সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই সুড়ঙ্গটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে গাম নীহারিকার দিকে প্রসারিত। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, মহাকাশের অদৃশ্য কিন্তু বিশাল জালের মতো কাঠামো আমাদের সৌরজগতকে অন্য নক্ষত্র অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে।
এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। মহাকাশ যে নিছক শূন্যতার ভাণ্ডার নয়, বরং গ্যাস, প্লাজমা ও শক্তির জটিল কাঠামো দিয়ে গঠিত, তার প্রমাণ মিলল আবারও। আন্তনাক্ষত্রিক সুড়ঙ্গের সন্ধান ভবিষ্যতে নক্ষত্রের জন্ম, সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও মহাকাশের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানে নতুন আলো ফেলবে।
আপনার মতামত জানানঃ