ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের নিশানা করে ১৯ এপ্রিলের কাছাকাছি সময়ে হামলা হতে পারে বলে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং অন্যান্য সংস্থা স্থানীয় কর্মকর্তাদের এই সতর্কবার্তা দিয়েছিল।
আইবি ও অন্যান্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) ও শ্রীনগরে ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরসূচি ছিল। এ উপলক্ষে শ্রীনগর শহর ও এর আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল এবং শ্রীনগর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের মতো পর্যটনস্থলগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে মোদির সফর বাতিল করা হয়। এই অবস্থায় ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের বাইসারান উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ বারের মধ্যে এমন সতর্কবার্তা নয়বারই সঠিক হয় না। কিন্তু এবার পর্যটকদের নিয়ে দেওয়া সতর্কতা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তবে স্থান ঠিক হয়নি। এখন সেটা বুঝতে পারাটাই কঠিন বিষয়।’ এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এটা ঠিক যে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের শ্রীনগরের কাছাকাছি পর্যটন এলাকায় হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।
মোদির নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১৮-১৯ এপ্রিলের আশপাশে জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে। পূর্বাভাস আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) সফরটি বাতিল করে। এই সফরে মোদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় তিনটি সেক্টরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে করে যেতে হতো। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁর যাত্রা ব্যাহত হতে পারত। তবে মোদির সফর বাতিল করা হলেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁদের সতর্কতা ও প্রস্তুতি কিন্তু কমাননি।
হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক নলিন প্রভাত শ্রীনগরে চার দিন অবস্থান করেছিলেন এবং শহরটির চারপাশের সব এলাকার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর দিন সকালে তিনি জম্মুতে পৌঁছান। কিন্তু হামলার পরপরই তিনি আবার সেখানে ফিরে যান।
হিন্দুস্তান টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পেহেলগামের কথা বলা হয়নি।
কিন্তু এখন জানা গেছে, বন্দুকধারীরা আগে থেকেই পেহেলগামে অবস্থান করছিলেন এবং এখনো তাঁরা সেখানে রয়েছেন। তাই স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতার বিষয়টি বড় হিসেবে সামনে আসছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু এখন জানা গেছে যে সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং এখনো ওই অঞ্চলে রয়েছেন, তাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের।
মাঠপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তাঁরা এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
আপনার মতামত জানানঃ