গত বছর সারা বিশ্বে অন্তত ১২৪ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের তিন দশকের রেকর্ড অনুসারে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৪। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সাংবাদিকের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েল দায়ী।
এর আগে ২০০৭ সাল ছিল সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর। ওই বছর ১১৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন, যার প্রায় অর্ধেকই ইরাক যুদ্ধে প্রাণ হারান।
সিপিজের প্রধান জোডি গিন্সবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকের সময়ে সাংবাদিক হওয়া সিপিজের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক। গাজার যুদ্ধ সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন প্রভাব ফেলেছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বৈশ্বিক নীতিমালার বড় ধরনের অবনতি প্রকাশ করছে। তবে গাজাই বিশ্বে একমাত্র বিপজ্জনক স্থান নয়।’
সিপিজে জানায়, ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময় অন্তত ৮৫ জন সাংবাদিক ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮২ জন ছিলেন ফিলিস্তিনি। ২০২৩ সালেও গাজায় ৭৮ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।
সংগঠনটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যার তদন্ত দমন করার চেষ্টা, নিহত সাংবাদিকদের দোষারোপ করা এবং এত গণমাধ্যমকর্মী হত্যার জন্য দায়ী সামরিক সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনার অভিযোগও তুলেছে।
গাজার ৮২ ও লেবাননের ৩ জন ছাড়াও ২০২৪ সালে ১৬টি দেশে আরও ৩৯ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। সুদান ও পাকিস্তানে ছয়জন করে সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। মেক্সিকোতে ৫ জন, সিরিয়ায় ৪, মিয়ানমার ও ইরাকে ৩ জন করে এবং হাইতিতে ২ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহের সময় আল জাজিরার একাধিক সাংবাদিককে হত্যা করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন— আল জাজিরা আরবি বিভাগের সাংবাদিক ইসমাইল আল-গুল ও তাঁর ক্যামেরাম্যান রামি আল-রিফি। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিম গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হন।
এক বিবৃতিতে, আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক এই হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ইসরায়েল এই হত্যার দায় স্বীকার করে, কিন্তু দাবি করে আল-গুল হামাসের সদস্য ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডসহ গাজার অন্যান্য সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
২০২৫ সালেও ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে ড্রোন হামলায় ছয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সাংবাদিক আহমাদ আল-শায়াহও ছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ