দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ ‘কুইন্সল্যান্ড হেলথ’কে ‘জৈব সুরক্ষা প্রোটোকলের এই বড় আকারের লঙ্ঘন’ নিয়ে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার এক ল্যাব বা গবেষণাগার থেকে প্রাণঘাতী ভাইরাসের শত শত নমুনা হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কুইন্সল্যান্ড সরকার।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ ‘কুইন্সল্যান্ড হেলথ’কে ‘জৈব সুরক্ষা প্রোটোকলের এই বড় আকারের লঙ্ঘন’ নিয়ে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের অগাস্টে কুইন্সল্যান্ডের ‘পাবলিক হেলথ ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি’ থেকে হেন্ড্রা ভাইরাস, লাইসাভাইরাস ও হান্টাভাইরাস’সহ একাধিক সংক্রামক ভাইরাসের ৩২৩টি শিশি ‘হারিয়ে যায়’।
কুইন্সল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিম নিকোলস বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া এসব শিশির প্রায় একশটিতে হেন্ড্রা ভাইরাস ছিল। আর এটি এমন এক ধরনের জীবাণু, যার ফলে মানুষের মৃত্যুর হার হতে পারে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত।
১৯৯০-এর দশকে আবিষ্কৃত এ ভাইরাসটি ঘোড়া থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল। ভাইসারটি আক্রান্ত ব্যক্তি ও ঘোড়ার ওপর একইরকম ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং।
“মানুষের মধ্যে হেন্ড্রা ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৫৭ শতাংশ। এমনকি যারা এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের পরিবারে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে এবং ওই অঞ্চলে পশু ও ঘোড়ার উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এটি,” বলেছেন ‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন’-এর অধ্যাপক রায়না প্লোরাইট।
বাকি ২২৩টি শিশিতে লাইসাভাইরাসের নমুনা ছিল, যা জলাতঙ্ক রোগের মতোই কাজ করে। এ রোগেও মানুষের মৃত্যুর হার বেশি। শিশিগুলোতে আরও রয়েছে হান্টাভাইরাসের দুটি নমুনা, যা মানুষের প্রায় ৩৮ শতাংশ মৃত্যুর হার’সহ আক্রান্তদের মধ্যে ‘হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম বা এইচপিএস’ রোগও তৈরি করতে পারে৷
ভাইরাসের এসব নমুনা কুইন্সল্যান্ডের ‘পাবলিক হেলথ ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি’তে সংরক্ষণ করা হলেও ফ্রিজারে ত্রুটির কারণে এগুলোর আর খোঁজ মেলেনি। যথাযথ তথ্য ছাড়াই এসব ভাইরাসকে পাঠানো হয় আরেকটি ফ্রিজারে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিকোলস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “এসব ভাইরাস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর বিষয়টিই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ভাইরাসের শিশিগুলোকে সুরক্ষিত সংরক্ষণাগার থেকে সরানো হতে পারে বা এগুলো হারিয়েও যেতে পারে। অন্যথায় এগুলো হিসাববিহীন হয়ে পড়েছে।”
এদিকে, ল্যাবটির কর্মীরা দাবি করেছেন, চুরি বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি এসব ভাইরাসকে।
নিকোলস বলেছেন, “এগুলো ল্যাব থেকে কেউ নিয়ে গেছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ভাইরাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি খুব জটিল কাজ, যা আসলে কোনও অপেশাদার মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।”
কুইন্সল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জন জেরার্ড অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, এ জৈব নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ফলে তৈরি ঝুঁকির পরিমাণ তুলনামূলক কম হবে।
“এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ ছাড়া, নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ছাড়া এসব ভাইরাস দ্রুত মারা যাবে। একইসঙ্গে এগুলো হয়ে পড়বে অকার্যকর।”
আপনার মতামত জানানঃ