ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নে যেখানেই কাজ করা হোক না কেন, সেখানেই অবৈধ স্থাপনা বা দখল পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। আজ শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় মিরপুর-১১ নম্বরের উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যাই ধরি, সেটাই অবৈধ। যে সড়কে যাই, সেখানেই অবৈধ দখল। যে খালে যাই, দুই পাড়ে অবৈধ দখল। অবৈধ দখলের ভিড়ে আমরা যারা বৈধ আছি, তারা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছি। সময় এসেছে, অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হতে হবে।
অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যায়। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতি জানতে চাইলে ড্রোন ব্যবহারের কথা জানান আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কোথাও উচ্ছেদ অভিযানের পর আবার দখল হচ্ছে কী না সে বিষয়টি মনিটরিংয়ে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে আমি এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। বিশেষ করে খালের দুই পাড় মনিটরিংয়ে ব্যবহৃত হবে ড্রোন। কারণ সব জায়গায় কিন্তু সব সময় যাওয়া যায় না। তাই ড্রোন দিয়ে দেখা হবে যে আবার দখল হয়েছে কী না। তার জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেখান থেকে সবকিছু মনিটরিং করা হবে। আমরা ডিজিটাল হতে চাই।
এর আগে গতকাল অবৈধভাবে ডিএনসিসির বিভিন্ন স্থাপনা দখল করে রাখা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। যেকোনো সময় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হতে পারে বলেও জানান।
গতকাল সকালে পল্লবীর ‘নান্নু মার্কেট’ এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গিয়ে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়েন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। নান্নু মার্কেট এলাকার অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রস্তুতি নেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মাহাতাব উদ্দিন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, “সকাল পৌনে ১১ দিকে অভিযান শুরু হওয়ার আগে কিছু মানুষ ইট- পাটকেল মেরে পালিয়ে যায়। এতে কেউ আহত হয়নি। এখন উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে পল্লবীতে থমথমে অবস্থা তৈরি হয়।অভিযান শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা সংঘর্ষে জড়ায়। কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলেও জানায়।
এসময় পল্লবীতে অবৈধ দখল উচ্ছেদে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বাধা পাওয়ার পর মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এখন থেকে কোনো নোটিস ছাড়াই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি বলেন, “নোটিস দিতে গেলে ঢাকা শহরে কোনো কাজ করা যাবে না। অবৈধভাবে দখল করে রাখলে সে জন্য আমি দায়ী না, সিটি করপোরেশন দায়ী না। বরং যে দখল করে রেখেছে সে-ই দায়ী।”
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, দখলদার সে যেই হোক, আমার দলের লোক কিংবা আমার করপোরেশনের লোক কিংবা অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি— তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি স্পষ্টভাবে বলছি— দখলদার আমার কাছে শুধুই দখলদার। এর আগেও অভিযানের সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে ফোন করিয়ে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও হয়তো অনেকে একই চেষ্টা করবে। তাদের উদ্দেশে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলব— আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা না করে দখল করা জায়গা ছেড়ে দিন।
মিরপুর-১১ নম্বরের ৩ নম্বর এভিনিউয়ের ৪ নম্বর সড়ক থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সুন্দর করে রাস্তা নির্মাণে এরই মধ্যে ৩০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছেন বলেও জানান ডিএনসিসি মেয়র।
তিনি বলেন, এ সড়কটি যোগাযোগের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি সর্বনিম্ন ৬০ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ ফুট পর্যন্ত চওড়া হবে। এটি সুন্দর করে নির্মাণ করার জন্য এরই মধ্যে আমি ৩০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছি। এ টাকা দিয়েই সড়কটি সুন্দর করে নির্মাণ করা হবে। গতকাল এবং আজ উচ্ছেদ অভিযান চলছে। গতকাল ৮৫ শতাংশ উচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছিল। আজ বাকিটা হবে। এরপরেও প্রয়োজন হলে কাল আবার উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৬
আপনার মতামত জানানঃ