খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই নির্মাণ দুর্নীতি, বিধিবহির্ভূতভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এসবের বিরুদ্ধে সহ পাঁচদফা দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামলে ছাত্র ও শিক্ষকদের বহিষ্কার করেন নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উপচার্য এসব করছেন ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে।
[zoomsounds_player artistname=”সংবাদটির ” songname=”অডিও শুনুন” type=”detect” dzsap_meta_source_attachment_id=”4696″ source=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/01/খুলনা-বিশ্ববিদ্যালয়.mp3″ thumb=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2020/10/fav.png” config=”default” autoplay=”off” loop=”off” open_in_ultibox=”off” enable_likes=”off” enable_views=”off” enable_rates=”off” play_in_footer_player=”default” enable_download_button=”off” download_custom_link_enable=”off”]
উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি। মেয়াদ পূরণের মাত্র ১২ দিন আগে তিনি সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা আহ্বান করেন এবং সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের চূড়ান্ত চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিধি মোতাবেক কারণ দর্শানোর জন্য ন্যূনতম সাত কর্মদিবস সময় দিতে হয়। উপাচার্যের চাকরির সময় কম থাকার কারণে দেড় কর্মদিবস সময় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উপচার্য তড়িঘড়ি করে এসব করছেন।
গত বছরের জানুয়ারির শুরুতে আবাসন সংকট নিরসন ও মানসম্পন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে করেন। শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে প্রায় দশ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর চার শিক্ষককে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চার শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, প্রভাষক শাকিলা আলম, ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আয়েশা রহমান আশা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো চার শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় উপচার্য। সম্প্রতি তিন শিক্ষককে বহিষ্কার আদেশ দেন।
জুনিয়র শিক্ষকদের বরখাস্ত করার জন্য উপচার্য অনেক অপকৌশল নিয়েছেন। ঘটনার ১০ মাস পর ১৩ অক্টোবর দেওয়া হয়েছে কারণ ব্যাখ্যা প্রদানের প্রথম নোটিশ। সে সময় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক এই নোটিশের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। ৯ নভেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকগণ ওই চিঠির জবাব দেন ২৩ নভেম্বর। পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির একজন সদস্যের প্রতি আস্থা না থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষকেরা তদন্ত কমিটি পুনরায় গঠনের জন্য অনুরোধ করেন। তদন্ত কমিটির একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রবর্তনের বিরোধিতা করার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। অভিযুক্ত শিক্ষকেরা সেই তথ্যসূত্র উল্লেখ করে কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই কমিটির কাছে ন্যায়বিচার না পাওয়ার অভিযোগ আমলে নেয়নি প্রশাসন, বরং বিশেষ সিন্ডিকেট সভার প্রতি কেন অনাস্থা এনেছে, এই মর্মে আরেকটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়েও পাননি অভিযুক্ত শিক্ষকেরা। এমনকি তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলেও দেওয়া হয়নি।
গত ২৬ নভেম্বর বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ১২ দিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। উপাচার্য একবারও তাকে দেখতে যাওয়া কিংবা ফোন করে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। তারা জানিয়েছেন, লিখিত জবাব দিতে চান। সেই মোতাবেক তারা ১২ জানুয়ারি লিখিত জবাবও দেন। কিন্তু তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ১০ তারিখের পত্রে তারা কীভাবে জবাব দেবেন, তা উল্লেখ না করায় ১২ তারিখে দেওয়া জবাব আমলে নেওয়া হয়নি—এমন অভিযোগ আছে।
কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুজন শিক্ষার্থীকে নানা মেয়াদে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা আন্দোলন করেছিলেন। বহিষ্কারের আগে তাদের দুজনকে তদন্ত কমিটি আহ্বান করেছিল। শিক্ষার্থীরা জানতে চেয়েছিলেন, আন্দোলন করেছে অনেকেই, কিন্তু শুধু দুজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা কেন হবে। বহিষ্কারাদেশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন করছেন। উপাচার্য তার মেয়াদ পূরণের আগেই তার অপছন্দের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে চান বলে অভিযোগ আছে।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে তড়িঘড়ি করে শাস্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়াকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উপচার্যের প্রতিহিংসার বাহ্যিক রুপ বলে মনে করেন। ক্ষমতার এতোটাই ভেতরে ঢুকে গেছেন তিনি সেখানে বসে প্রতিশোধপরায়ণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তার কথার বাইরে যাওয়া লোকদের বেছে বেছে বহিষ্কার করা তার ঔদ্ধত আচরণ প্রকাশ করে। উপচার্যের প্রতিহিংসার আগুনের কবলে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর জেরে তিন শিক্ষক ও দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক চার্চা করছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অত্যাচার বন্ধ করে তাদের স্বপদে বহাল রাখার দাবিও জানিয়েছে তারা। আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছর জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীরা আবাসিক সঙ্কট সমাধানসহ কিছু বিষয়ে দাবি জানিয়ে ছিলেন। সে দাবির সঙ্গে সংহতি জানানোয় শিক্ষকরা কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, যার প্রতিবাদ আমরা জানিয়ে ছিলাম। এবার গত ১৮ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ ওই তিন শিক্ষককে চূড়ান্ত নোটিশ পাঠায়। এবারের নোটিশ গুরুতর- তাদের চাকরি থেকে অপসারণ কেন করা হবে না সে বিষয়ে, উত্তর দেওয়ার যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়নি শিক্ষকদের।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত কয়েকমাসে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান যে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই তিন শিক্ষককে প্রতিহিংসা পরায়ণভাবে শিক্ষকতা পেশা থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের (আবাসন-সংকট সমাধানসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া) প্রতি সংহতি প্রকাশ যেকোনো শিক্ষকের সাধারণ কর্তব্যবোধের পরিচায়ক; আর ওই শিক্ষকবৃন্দ সেটাই করেছিলেন। সাধারণ শিক্ষকসুলভ আচরণকে কর্তৃপক্ষ যে বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে, তার থেকেই আমরা বুঝতে পারি কর্তৃপক্ষের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য সন্মন্ধে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৮
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ