দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রি স্টেট প্রদেশের একটি গুহার দেয়ালে আঁকা একটি রহস্যময় প্রাণীর চিত্র দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। এটা কি ওয়ালরাস? আকৃতি অনেকটা সেরকম। কিন্তু আফ্রিকায় এমন কোনো প্রাণী নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এটি আসলে কী?
জানা যায়, চিত্রকর্মটি দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলের আদিবাসী শিকারি-সংগ্রাহক ‘সান’রা তৈরি করেছিলেন। সানদের পরিবেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল, যা তারা তাদের শিলা শিল্প দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন।
লোচ নেস মনস্টারের মতো কিংবদন্তি প্রাণীদের নিয়ে অনুসন্ধান চালানো কিছু ক্রিপ্টোজুলজিস্ট পরামর্শ দিয়েছেন, শিলা শিল্পটি একটি স্যাবার-দাঁতযুক্ত বিড়ালকেও চিত্রিত করতে পারে।
তবে যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় তা হলো, শিলা শিল্পে প্রাচীন অতীতের নিদর্শনও ছিল। সানরা জীবাশ্মের পদচিহ্ন, হাড়, মাথার খুলি এবং দীর্ঘ-বিলুপ্ত সরীসৃপের মধ্যে বাস করতো এবং শিকার করতো।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখিয়েছে, সানদের বসবাস করা ফ্রি স্টেটের সীমান্তবর্তী লেসোথোতে ডাইনোসরের হাড়ও আবিষ্কার করা হয়েছে। সানরা গুহার দেয়ালে ডাইনোসরের পায়ের ছাপও এঁকেছিল।
নতুন গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, ফ্রি স্টেট গুহার দেয়ালে চিত্রিত রহস্যময় প্রাণীটি আরেকটি বিলুপ্ত প্রজাতি- ডাইসিনোডন্ট। ১৮৪৫ সালে ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ এবং শারীরস্থানবিদ স্যার রিচার্ড ওয়েন বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ডাইসাইনোডন্টস প্রথম বর্ণনা করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত স্তন্যপায়ী প্রাণীটির পূর্বপুরুষদের একটি দীর্ঘ সিরিজও লিখেছেন। যা প্রমাণ করেছিল, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ‘থেরাপসিড’ নামে পরিচিত একটি অদ্ভুত ধরণের সরীসৃপ থেকে উদ্ভূত।
মনে করা হয়, চিত্রকর্মটি সর্বশেষ ১৮৩৫ সালে করা হয়েছিল, যখন সানরা ফ্রি স্টেটের অঞ্চলটি ছেড়ে চলে যায়। তবে এটি পুরানোও হতে পারে, কারণ সানরা হাজার হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে বাস করেছে। তারা তাদের সংস্কৃতির চিনহ রেখেছেন নানাভাবে। ‘ডাইসিনোডন্ট’ প্রজাতিটি আনুষ্ঠানিকভাবে আবিষ্কার এবং নামকরণের কমপক্ষে দশ বছর আগে এই চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
ফ্রি স্টেট প্রদেশের কিছু অংশসহ দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলটি লক্ষ লক্ষ জীবাশ্মে ভরা। তাদের বেশিরভাগই প্রাচীন ‘ডাইসিনোডন্ট’ প্রজাতির অন্তর্গত। এই স্তন্যপায়ীর পূর্বপুরুষরা প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে বসবাস করত। এই প্রজাতির মধ্যেই অনেক প্রজাতি এবং দুর্দান্ত বৈচিত্র্য ছিল। এদের দেহের আকার ইঁদুরের মতো থেকে শুরু করে গন্ডারের মতো ছিল। এরা তাদের সময়ের প্রভাবশালী প্রজাতির প্রাণী ছিল।
ফ্রি স্টেটে প্রায়শই প্রাচীন এইসব প্রাণীর খুব বড় মাথার খুলি এবং দাঁতসহ নানা অঙ্গ পাওয়া যায়। মাটিতে-জঞ্জালের মধ্যেও কারু শিলা পাওয়া যায়। সান মিথ রয়েছে, ‘বিশাল দেহের বর্বর কিন্তু এখন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত, খুব দীর্ঘকাল আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘুরে বেড়াত।’ এই গল্পটি ডাইসিনোডন্ট প্রজাতিকে উল্লেখ করতে পারে।
নতুন গবেষণাপত্রের জন্য গবেষকেরা লা বেল ফ্রান্স নামের একটি খামারের গুহার দেয়ালে থাকা শিলা শিল্প পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেখানেও এমন অদ্ভুত একটি প্রাণীকে চিত্রিত করা হয়েছে। দুটি বর্ধিত দাঁত নিচের দিকে নির্দেশ করে, যা আজ আফ্রিকায় বর্তমানে বসবাসকারী যে কোনো দাঁত বহনকারী প্রাণীর মতো নয়।
গবেষকেরা লিখেছেন, আমরা ফ্রি স্টেটের আশেপাশে অনেকগুলো জীবাশ্ম পেয়েছি, যা আমার অনুমানকে সমর্থন করে যে, সানরা এই অঞ্চলে ডাইসিনোডন্ট খুলি এবং হাড় আবিষ্কার করেছিল। তারপর তারা কল্পনা করে জীবন্ত প্রাণীটির পুনর্গঠন আঁকেন শিলা শিল্পে। সূত্র: ইত্তেফাক।
আপনার মতামত জানানঃ