৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে; যখন সৃষ্টি হচ্ছিল আমাদের পৃথিবী। বিগব্যাং এর প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের এই সৌরজগৎ সৃষ্টির মহাযজ্ঞ শুরু হয়। বিগব্যাং সংগঠিত হবার বহু বছর পরে মহাজাগতিক ধুলিকণা থেকে আমাদের এই সৌরজগৎ গঠনের প্রক্রিয়া আরম্ভ হতে থাকে। তার অনেক পরে আমাদের পৃথিবী তৈরি হয়। সৌরজগতে প্রায় একেবারে প্রথমদিকে ২২ টি গ্রহ ছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল আকারে ছোট ছোট। তখন এরা সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় এক অন্যকে ধাক্কা দেয় এবং শুরু হয় বিশাল সংঘর্ষ। ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে আমাদের বাসস্থান। কিন্তু তখনো ছোট ছোট সংঘর্ষ ঘটতেই থাকে। এভাবে বহু বছর পরে একেবারেই শান্ত হয়ে যায় আমাদের এই সৌরজগৎ। এই যে সংঘর্ষগুলো যে হল এর মাধ্যমে গ্রহগুলো আকার পেয়েছে। কিন্তু ঠিক তখনই গ্রহগুলোর মধ্যে জমা হয়েছিল প্রচুর শক্তি যা আজো রয়েছে।
একবার আপনার দুই হাত একটা অন্যটা দিয়ে ঘষে দেখুন তো কি হয়? নিশ্চই দেখতে পেয়েছেন যে হাত গরম হয়ে উঠেছে। তাহলে বুঝুন এই সামান্য ঘষাতেই যদি হাত গরম হয়ে উঠতে পারে তাহলে ঐ সময়কার বিশাল বিশাল সংঘর্ষে কি পরিমাণ শক্তি লুকিয়ে ছিল। আর ঐসব শক্তি আটকে গেছে গ্রহগুলোর কেন্দ্রে। এখন কথা হল যে, কেন ঐ শক্তি আটকে গেল? তাহলে বলি শুনুন…
যখন গ্রহগুলোর একটা অংশের উপর অন্য অংশ এসে পরে তখন উভয়ে মিলে একটা বড় খন্ডে পরিণত হয়। এবং প্রচন্ড উত্তাপে উভয় গলে গিয়ে নতুন রূপ পায়। এভাবে অনেক গুলো অংশ পরতে পরতে সবগুলো মিলে এক বিশাল গ্রহ তৈরি করেছিল। তখন সমস্ত গ্রহই প্রচণ্ড উত্তাপে প্রায় গলিত অবস্থায় ছিল এবং কেন্দ্রে প্রচন্ড মহাকর্ষ বল ও চাপের কারনে পদার্থগুলো ছিল আরো বেশি উত্তপ্ত আর প্রায় কঠিন। এই অবস্থায় গ্রহগুলোর উপরের আচ্ছাদন শক্তি মুক্ত করে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন রূপ ধারন করে কিন্তু ভেতরে বা কেন্দ্রের দিকের গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা উপরের কঠিন আচ্ছাদনের ভিতরে আটকা পরে যায়। এভাবেই
এখনো পৃথিবীসহ প্রায় সকল গ্রহের কেন্দ্রেই এই গলিত আর প্রচণ্ড উত্তপ্ত লাভা বিরাজ করছে। এই হল মোটামুটি আমাদের পৃথিবীর গল্প।
এবারে টেকটনিকের গল্প বলব। কি এই টেকটনিক? এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলঃ পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। এর প্রত্যেক ভাগকে টেকটনিক বলা হয়। এবারে চলুন মূল গল্পে- পৃথিবী গঠিত হবার সময়ে আমরা জেনেছি যে অনেক চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে একে।
তখন পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠ অনেকগুলো বিশাল ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়; ঠিক যেন ছোটবেলায় আমাদের খেলা ‘ডিয়ার’ ফুটবলের উপরের ভাগের মত। এসব বড় বড় খন্ড একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে আছে আর এদের মধ্যে চলছে অবিরাম ঘর্ষণ। এভাবে পৃথিবীর উপরের আচ্ছাদনকে পুরো আটটি বড় খন্ডে চিহ্নিত করা হয়েছে। এচাড়াও আরো আছে ছোট ছোট অনেক টেকটনিক পাত।
আফ্রিকার পাত, এন্টার্কটিকার পাত, ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাত, ভারতীয় পাত, অস্ট্রেলীয় পাত, ইউরেশীয় পাত, উত্তর আমেরিকার পাত, দক্ষিণ আমেরিকার পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত।
অপ্রধান বা ছোট টেকটনিক পাতের সংখ্যা কয়েক ডজন হলের প্রধান সাতটি হলঃ আরব্য পাত, ক্যারিবীয় পাত, জুয়ান দে ফুকা পাত, কোকাস পাত, নাজকা পাত, ফিলিপিনীয় পাত, স্কোশিয়া পাত।
এইসকল পাতগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে পুরো পৃথিবীকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। এইসব পাত কিন্তু এক যায়াগায় স্থির হয়ে নেই। বরং এরা সঞ্চারনশীল! আর এদের এই সঞ্চালনের জন্যই পৃথিবী আকৃতি পাচ্ছে, ভূকম্পণ হচ্ছে, নদি খাত আর সমুদ্র সৃষ্টি হচ্ছে, মহাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। তবে এদের গতি খুবই কম। বছরে মাত্র ৫-১০ সে.মি।
পৃথিবীর বরাবরই বিবর্তনের পথে হেঁটেছে। বর্তমান সময়েও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে পৃথিবীর টেকটনিক প্লেটগুলি সরে যাওয়ার ফলে পৃথিবীতে দেখা গিয়েছে নতুন ধরণের প্রজাতি। প্রকৃতি বরাবরই খামখেয়ালি। বহু বছর ধরে টেকটনিক প্লেটগুলি স্থান পরিবর্তন করেছে। আর প্রতিবারই নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছে।
এই নতুন প্রজাতি সর্বদাই সমুদ্র থেকে তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর বিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয় সমুদ্র থেকেই। সেখানে এমনতিই নানা ধরণের সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে। সেখানেই নতুন ধরণের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে। সমুদ্রের তলা থেকে মেলা নানা ধরণের ফসিল থেকে এগুলি আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে। আজ থেকে আড়াইশো মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসর যুগে বহু ফসিল পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু জলের নিচে থাকা সেইসময়ের ফসিলগুলি অনেক বেশি অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীতে যখনই কোনও প্রজাতির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে তখনই বিবর্তনের পথে গিয়েছে পৃথিবী। এরই শিকার ডাইনো যুগের বিশাল প্রাণীরা। অধিক মাত্রায় বিকশিত হওয়ার ফলে এই প্রাণীরা পৃথিবীর ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল। তাই পৃথিবী নিজেই তাঁদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সমুদ্র থেকে এমন একটি মাছ পাওয়া গিয়েছিল যা অন্য সব ধরণের প্রজাতি থেকে আলাদা ছিল। এই মাছ খুব অল্পদিনের মধ্যেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যদি এর বাড়বাড়ন্ত হত তবে আজকের দিনে বহু সামুদ্রিক প্রাণী হয়তো বিলোপের পথে চলে যেত। তবে এই মাছের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে মৃত্যুর আগে অন্যকে নিজের ডিএনএ দান করেছে সে। এটাই বেশি ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। তাহলে কোন নতুন প্রাণী রয়েছে জলের অতলে।
আপনার মতামত জানানঃ