পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রাখতে দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণীগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কী কারণে এই প্রাণীগুলো একে একে পৃথিবী থেকে উদ্বেগজনক হারে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন একদল গবেষক।
পৃথিবী থেকে দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণী কমার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে মানুষের সৃষ্টি করা চাপই বেশি দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা।
গবেষণাপত্রে একটি পূর্ণ পরিসংখ্যানও দেখানো হয়েছে। তাতে বলা হয় আনুমানিক ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে ৫৭ প্রজাতির দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণী ছিল। যেসব তৃণভোজী প্রাণীর ওজন এক হাজার কেজির বেশি সেগুলোকে এই দলে ফেলা হয়েছে।
সিনোজোয়িক যুগের (বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আধিপত্যের কাল) শেষ ভাগে (কোয়াটারনারিতে) এসে মানুষ শিকারের খোঁজে বের হওয়া শুরু করলে শত শত প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হতে শুরু করে। বিশেষ করে বৃহৎ আকারের তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এসময় উল্লেখভাবে বিলুপ্ত হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ১৬০ প্রজাতির বেশি প্রাণী, যেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণীও ছিল, মানব সৃষ্ট সংকটে প্রাণ হারাতে থাকে। মানুষের কারণে প্রাকৃতির বাস্তুতন্ত্রেই পরিবর্তন আসে। এ পর্যায়ে গাছপালার ধরনেও পরিবর্তন আসে।
ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। গবেষকরা দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ বের করেন।
গবেষকদের মতে, প্রথমত: সিনোজোয়িক যুগের শেষ ভাগে বিশেষ কোনো অঞ্চল বা আবহাওয়ায় নয় বরং পুরো পৃথিবীতেই প্রাণী বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে।
দ্বিতীয়ত: এই বিলুপ্তি একটি নির্দিষ্ট আকারের প্রাণীদের বেলায় বেশি হয়েছে। যেমন: ক্ষুদ্রাকার প্রাণীদের তুলনায় দৈত্যাকার দেহের অধিকারী মেরুদণ্ডী প্রাণীরা বেশি বিলুপ্ত হয়েছে।
বিলুপ্তির এই ধরন নানা বৈশ্বিক ঘটনা, ভৌগোলিক বিস্তার এবং হোমো স্যাপিয়েন্সের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
এটা প্লাইস্টোসিন যুগের গণবিলুপ্তির মতো ঘটনা নয়। ওই সময়ে মূলত জলবায়ুর কারণে সব প্রাজাতির প্রাণীর গণবিলুপ্তি হয়েছে। প্রাণীর আকার বা প্রজাতি সে সময় বিলুপ্তির ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলনি।
কোয়াটারনারির শেষ ভাগে প্রাণীর বিলুপ্তিতে মানুষের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মানুষ এখন পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সব প্রাণীর ভূমিকা অনুধাবন করতে পারছে এবং প্রাণীর বিলুপ্তি রোধে ও তাদের আবাসস্থলের সুরক্ষায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। সেইসঙ্গে নানা প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ গ্রহণের হারও বাড়ছে। কিন্তু তাতেও ওই বিলুপ্তির সময়ে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কমানো যাচ্ছে না।
বর্তমানে পৃথিবীতে স্তন্যপায়ী প্রাণীর যত প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে ৪৭ শতাংশকে বিলুপ্তিপ্রায়, ঝুঁকিপূর্ণ বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। আরও ১২ শতাংশকে ঝুঁকির কাছাকাছি রাখা হয়েছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে দৈত্যাকার তৃণভোজী প্রাণী বিলুপ্তির এই ধারা অব্যাহত আছে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চীনে উল্লেখযোগ্য হারে হাতি ও গণ্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া, সারা পৃথিবীতেই উল্লুক, জেব্রার নানা প্রজাতি ও মহিষ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে মানব সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে দায়ী করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ