হ্যারি পটারের জাদুর দুনিয়ার সঙ্গে কমবেশি পরিচয় রয়েছে সবাই। জে কে রাওলিংয়ের অমর সৃষ্টি এই নভেল সিরিজ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের তালিকায় অন্যতম হিসাবে নাম রয়েছে হ্যারি পটারের। জে কে রাওলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজে ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর জনপ্রিয়তা সবার জানা। লেখকের সেই কল্পনাকে এবার বাস্তবে তুলে আনলেন চীনের গবেষক। ঐ ‘ক্লোক’ তিনি নিজেই বানিয়ে ফেললেন।
বইয়ের পাশাপাশি হ্যারি পটারের গল্পকে কেন্দ্র করে আটটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। হলিউডের গণ্ডি পেরিয়ে যার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে, মহাদেশে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন চরিত্রগুলোর কলাকুশলীরাও। কারণ, হ্যারি পটারের বইগুলোর পাতায় পাতায় রয়েছে চমক। জাদুবিদ্যাকে এমন আকর্ষণীয় গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হয়েছে, যা আট থেকে আশি কাউকেই নিরাশ করে না। বরং, সবাই গোগ্রাসে গেলে সেই কাহিনি।
এহেন হ্যারি পটারে ব্যবহৃত একটি ‘অস্ত্র’ এবার হাতে পেল চীন। সৌজন্যে তাদের গবেষক চু জুনহাও। তিনি সম্প্রতি একটি অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার করেছেন, যা বিজ্ঞানী মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে। লেখকের কল্পনাকে বাস্তবে সত্যি করে তুলেছেন চীনের ঐ গবেষক। তিনি বানিয়ে ফেলেছেন বাস্তবের ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’। এটি এক ধরনের পোশাক, হ্যারি পটারের সাতটি বই জুড়ে যার একাধিক চমকপ্রদ ব্যবহার লক্ষ করা গিয়েছে।
কী এই ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লো ‘? চীনা গবেষকই বা আসলে কী করে দেখালেন? জে কে রাওলিংয়ের কাহিনি অনুযায়ী, এটি একটি জাদু-পোশাক যা পরলে যেকোনো ব্যক্তি অদৃশ্য হয়ে যান। তাকে আর দেখা যায় না। চোখের সামনে ঘোরাফেরা করলেও তার উপস্থিতি দেখতে পাবেন না কেউ।
চীনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আলোর তারতম্যকারী অত্যাধুনিক উপাদান (অ্যাডভান্সড লাইট ম্যানিপুলেটিং মেটেরিয়াল) দিয়ে এই বিশেষ ‘ক্লোক’ বানিয়েছেন চু জুনহাও। প্রথাগত দৃশ্যমানতার নিয়মকে যা চ্যালেঞ্জ করে। প্রকাশ্যে তা ব্যবহার করেও দেখানো হয়েছে।
‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর মধ্যে দিয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেন আলোকে ধোঁকা দিয়েছেন চীনা গবেষক। যা খালি চোখে দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, তার মধ্যেকার সূক্ষ্ম পার্থক্য তিনি আবছা করে দিয়েছেন।
চু জুনহাওয়ের এই আবিষ্কারকে ‘যুগান্তকারী’ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। বাস্তবে এর প্রয়োগ হতে পারে মারাত্মক। এমনকি সামরিক কাজেও এই পোশাক ব্যবহার করতে পারে চীন।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’ ব্যবহার করে সবার আগে অদৃশ্য ঘর তৈরির দিকে নজর দিতে পারেন চীনা আধিকারিকেরা। তা যদি সম্ভব হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হবে।
জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর ব্যবহার চালু করতে পারে বেইজিং। এমনকি, সামরিক কাজেও তা লাগানো হতে পারে। এই ধরনের ‘অস্ত্র’ আগে কখনো কোনো দেশের হাতে পড়েনি।
‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’ সামরিক কাজে ব্যবহার করা হলে যেকোনো সংঘর্ষ বা যুদ্ধে প্রথম থেকেই কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে শি জিনপিংয়ের দেশ। চীনা যোদ্ধারা বাস্তবিক ‘অদৃশ্য’ হয়ে যুদ্ধ করতে পারবেন। ভবিষ্যতে তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষকেরা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর ব্যবহার পুরোদমে চালু হলে অপটিক্যাল টেকনোলজির এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। এই প্রযুক্তি বদলে দিতে পারে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংজ্ঞা।
একাধিক গোপন সামরিক অভিযানে ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর ব্যবহার বেজিংয়ের হাতে তুলে দিতে পারে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। আগামী দিনে এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আমূল বদলে ফেলতে বাধ্য করবে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে শুধু সামরিক নয়, ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এর ব্যবহার চালু হলে তার দ্বারা রাজনীতি, সমাজ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বিজ্ঞানেরও প্রভূত উন্নতির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
চীনা গবেষকের আবিষ্কার এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তার ব্যবহার চালু হয়নি। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে আগামী দিনে এটি বেজিংয়ের অন্যতম শক্তিশালী ‘অস্ত্র’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হ্যারি পটারের ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’ ছিল অভেদ্য এবং অক্ষয়। মানুষ তো বটেই, কোনো পশুপাখিও তার পিছনে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখতে পেত না। এই পোশাক নষ্ট হত না। বছরের পর বছর ধরে তা একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছিল।
চীনে তৈরি ‘ইনভিজিবিলিটি ক্লোক’-এ অবশ্য কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেগুলোকে আপাতত উপেক্ষাই করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। ‘যুগান্তকারী’ তকমা পেয়ে গিয়েছে চু জুনহাওয়ের সৃষ্টি।
আপনার মতামত জানানঃ