পৃথিবীর ‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’ বা অক্সিজেনের যাত্রা কেমন ছিল, সে বিষয়টিউঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’ হল আড়াইশ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে মুক্ত অক্সিজেন প্রবাহ শুরুর ঘটনা, যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রথমবার বিশাল পরিমাণ মুক্ত অক্সিজেন জমা হতে দেখা যায়। এর ভিত্তিতেই পৃথিবীর জটিল জীবন ধারণ প্রক্রিয়ার উত্থান ঘটেছিল। একে সংক্ষেপে ‘জিওই’ বলেও ডেকে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
বিভিন্ন ভূ-রাসায়নিক উদঘাটনে প্রকাশ পেয়েছে, পৃথিবীর ‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট (জিওই)’র স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২০ কোটি বছর, যা ভূমিকা রেখেছে আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও বিভিন্ন মহাসাগর রূপান্তরে।
‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’ প্রায়শই একক ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হলেও এটি আসলে দীর্ঘ ও জটিল এক প্রক্রিয়া ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
নতুন এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’র সহকারি অধ্যাপক চ্যাডলিন অস্ট্র্যান্ডার, যেখানে তিনি মনোযোগ দিয়েছেন পৃথিবীর গতিশীল সময়ের ওপর।
গবেষণায় অস্ট্র্যান্ডারের গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছে, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রাথমিক উত্থান একেবারেই মসৃণ ছিল না। তবে, ২২০ কোটি বছর আগে এটি পৃথিবীর পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শুরু করে।
“বিভিন্ন মহাসাগরে অক্সিজেন জমা হওয়ার বিষয়টি ট্র্যাক করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল,” বলেন বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচার-এ প্রকাশ পাওয়া এ গবেষণার প্রধান লেখক অস্ট্র্যান্ডার।
“আমাদের ডেটা এ ধারণাকে সমর্থন করে যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রসার খুবই গতিশীল ছিল, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মহাসাগরেও ছড়িয়ে পড়ে।”
ওই সংকটময় মুহুর্তে সমুদ্রের ‘অক্সিজেনেশন’ বুঝতে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ট্রান্সভাল সুপারগ্রুপ’ অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন সামুদ্রিক শেলের ওপর মনোযোগ দিয়েছিল গবেষণা দলটি।
এক্ষেত্রে, সামুদ্রিক শেলে থাকা স্থিতিশীল ‘থ্যালিয়াম (টিএল)’ আইসোটোপের অনুপাত ও রেডক্স-সংবেদনশীল বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা মহাসাগরগুলোতে অক্সিজেনের মাত্রা ওঠা নামা করার প্রমাণ পেয়েছেন, যার মিল রয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের গতিবিধি পরিবর্তনের সঙ্গে।
অস্ট্র্যান্ডার ব্যাখ্যা করেন, মহাসাগরে অক্সিজেনের পরিমাণ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ পৃথিবীর আদি প্রাণগুলো সম্ভবত এখান থেকেই উদ্ভূত ও বিবর্তিত হয়েছিল।
“মহাসাগরে অক্সিজেনের স্তরগুলো প্রাথমিক বা শুরুর দিকের প্রাণের সঞ্চার ঘটানোর ক্ষেত্রে সম্ভবত বায়ুমণ্ডলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।”
এ গবেষণাটির মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ লিডসে’র অধ্যাপক সায়মন পল্টন ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডে’র গবেষক আন্দ্রে বেকারের আগের একটি গবেষণা।
২০২১ সালে পরিচালিত ওই গবেষণায় গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছিল, জিওই শুরুর প্রথম ২০ কোটি বছরে অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেনি, যা এর আগের প্রচলিত ধারণার অনেক পরে।
জিওই’র আগে ‘অ্যানক্সিক অ্যাটমস্ফিয়ার’ বা বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন না থাকার প্রমাণও মিলেছে বিরল কিছু সালফার পাললিক আইসোটপের বিভিন্ন নিদর্শনে।
এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, জিওই’ চলাকালীন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা একাধিকবার ওঠানামা করেছে। আর এ বিষয়টি থেকে ধারণা মেলে যে, এটা কোনও একক ঘটনা ছিল না।
আপনার মতামত জানানঃ