চীনের প্রায় অর্ধেক বড় শহরই ডুবে যাওয়ার ‘মাঝারি থেকে গুরুতর’ ঝুঁকিতে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রায় লাখ লাখ মানুষ রয়েছে বন্যার ঝুঁকিতে। আজ শুক্রবার প্রকাশিত চীনে দেশব্যাপী স্যাটেলাইট ডেটার সমীক্ষা অনুসারে এসব তথ্য দিয়েছেন গবেষকেরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির লেখকেরা দেখেছেন যে, চীনের শহরগুলোর ভূমির ৪৫ শতাংশ প্রতিবছর ৩ মিলিমিটারের বেশি এবং ১৬ শতাংশ প্রতিবছর ১০ মিলিমিটারেরও বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ নির্মিত অবকাঠামোর ওজনের কারণেও এমনটি ঘটছে বলে জানান গবেষকেরা।
গবেষক দলের প্রধান সাউথ চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির আও জুরুই বলেছেন, চীনের শহুরে জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই ৯০ কোটির বেশি। তাই শহরের ছোট একটি অংশের ভূমিও ডুবে গেলে তা নগরজীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
শহরগুলোর ভূমির উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে বার্ষিক প্রায় ১০৪ কোটি ডলার খরচ করতে হচ্ছে চীনকে। আগামী শতাব্দীর মধ্যে দেশটির উপকূলীয় ভূমির প্রায় এক-চতুর্থাংশের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে কম হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়। এই আশঙ্কা সত্যি হলে বন্যাকবলিত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে চীনের লাখ লাখ মানুষ।
ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিন্ডাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসার্চের গবেষক রবার্ট নিকোলস বলেছেন, কেবল একটি বা দুটি জায়গার সমস্যা নয়, এটি এখন চীনের একটি জাতীয় সমস্যা। বিশ্বের অন্যান্য অংশে কী ঘটছে সেটাও প্রকাশ করছে এই সমস্যা।
উত্তরের শহর তিয়ানজিনে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাস। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে তিয়ানজিনের নাম। গত বছর ‘আকস্মিক ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের’ পর শহরটির প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে তদন্তকারীরা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাসের পাশাপাশি ভূ-তাপীয় কূপ নির্মাণকে দায়ী করেছেন।
চীনে যেসব অঞ্চল থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়, সেসবও অতিরিক্ত খননের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান গবেষকেরা। তাঁরা বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রায়ই জমিকে শক্তিশালী করার জন্য মাটিতে সৃষ্ট ফাটলে কংক্রিট ব্যবহার করে। এতে মাটি আরও ভঙ্গুর হয়।
সমস্যাটি শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক পৃথক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৩ লাখ বর্গকিলোমিটার (২৪ লাখ বর্গমাইল) ভূমি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির রাজধানী জাকার্তার বড় অংশ এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে।
রবার্ট নিকোলস বলেছিলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলো টোকিও থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ১৯৭০-এর দশকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত শহরটির প্রায় পাঁচ মিটার (১৬ ফুট) ডুবেছিল।
২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের এক সমীক্ষা অনুসারে, ডুবে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকা ৪৪টি প্রধান উপকূলীয় শহরের মধ্যে ৩০টিই এশিয়ায়।
আপনার মতামত জানানঃ