মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট নতুন করে উত্তেজনায় বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের কূটনীতির প্রধান বিষয় হলো, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব। এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং কূটনীতি চলে। কিন্তু বাংলাদেশের কূটনীতিতে কিছু সুস্পষ্ট বিষয় রয়েছে যে বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। এর মধ্যে ইসরায়েল ইস্যুটি অন্যতম।
বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল যাওয়া নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোন রকম কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের পর বাংলাদেশ কঠোরভাবে তার সমালোচনা করেছে। গাজা ইস্যুতে বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এবং সেখানে যে সন্ত্রাস এবং অমানবিক কার্যক্রম ইসরায়েল পরিচালনা করেছে তার কঠোর ভাষায় যারা নিন্দা করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদান করেছে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান স্বাভাবিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে বাংলাদেশ কী করবে। বাংলাদেশ এখানে কী নীরবতা অবলম্বন করবে নাকি কোন পক্ষ অবলম্বন করবে?
পররাষ্ট্র মনন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মরতরা বলছেন, বাংলাদেশ পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। চটজলদি যদি কোন বক্তব্য বা মন্তব্য বাংলাদেশ করছে না। পুরো ঘটনা বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্ব মানবতার পক্ষে এবং মানবতা বিরোধী সকল অপরাধকে বাংলাদেশ ঘৃণা করে।
উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশ কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এখন ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন হামলার পরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এ বিষয়টি নিয়ে দূরত্ব বজায় রাখবে এবং একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে পুরো বিষয়টিকে পর্যালোচনা করবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যেন শান্তি ফিরে আসে সেটি বাংলাদেশ সবসময় চায় এবং বাংলাদেশের কূটনীতির এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও বটে। আর মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য ইরান এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইরানের বিশ্বে একটি বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে আছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে পা ফেলতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
বিভিন্ন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক অবস্থান এখন পর্যন্ত তা সঠিক আছে। বাংলাদেশ যেমন গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করছে এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবি করছে ঠিক তেমনি ভাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যে অশান্ত পরিবেশ তা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ আহ্বান জানাবে। বাংলাদেশ কারও পক্ষে নয় বরং বিশ্ব শান্তি এবং ভ্রাতৃত্বের পক্ষে। একারণেই বাংলাদেশ পুরো ঘটনা থেকে নিজেদেরকে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ