“আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রহের গঠন নিয়ে গবেষণা করছি। তবে এর আগে আমরা কখনোই ভাবিনি যে, গ্রহের গঠন সিমুলেশনে দেখানো পদ্ধতিতেও হতে পারে। অথচ আমরা সবসময় ধরে নিয়েছি যে গ্রহগুলো গোলাকার।”
‘ফ্ল্যাট-আর্থারস’ বা যারা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবী আসলে গোল নয় বরং সমতল, তারা হয়তো এতোদিন ঠিকই বলেছেন। কেবল ছোট্ট একটি সমস্যা– তারা সম্ভবত দাবিটি কয়েকশো কোটি বছর দেরিতে করে ফেলেছেন!
নতুন ধারণা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। সে অনুযায়ী, কয়েকশ কোটি বছর আগেও পৃথিবী সম্ভবত সমতলই ছিল।
‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার’-এর বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, নবগঠিত গ্রহ গোলাকার রূপে যাওয়ার আগে চ্যাপ্টা গোলাকৃতি আকার ধারণ করতে পারে।
প্রচলিত ধারণা হল, ‘প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক’ অথবা নবগঠিত নক্ষত্রপুঞ্জের আশপাশে থাকা ঘূর্ণয়মান গ্যাস থেকে বিভিন্ন গ্রহের উৎপত্তি, যার চারপাশে ধুলো ও গ্যাসের বলয় থাকে। তবে এটা কীভাবে ঘটছে, এখন পর্যন্ত সে বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরাও। ফলে, এখনও বিজ্ঞানে বিতর্কের বিষয় এটি।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি ‘কোর অ্যাক্রিশন’ নামে পরিচিত, যেখানে সৌরজগতে থাকা বিভিন্ন গ্রহের বৈচিত্র্যময় গঠনপ্রক্রিয়ার পাশাপাশি কীভাবে সৌর বায়ু বিভিন্ন হালকা উপাদানকে সৌরজগতের বাইরে ও ভারী বস্তুকে সূর্যের কাছাকাছি টেনে নেয়, সে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর ধূলিকণা থেকে বিশালাকারের গ্রহে পরিণত হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিরই ব্যাখ্যা রয়েছে এতে।
তবে, এর বিকল্প মডেলের কথাও বলেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ‘ডিস্ক ইনস্ট্যাবিলিটি’ মডেল নামে পরিচিত। এ তত্ত্ব অনেকের কাছেই খুব একটা পছন্দের না হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এর।
মডেল অনুসারে, ডিস্ক বা বলয়ের মধ্যে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণা সরাসরি ঘনীভূত হয়ে গঠিত হয় গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ, যেখানে সময়ও লাগে অনেক কম। এমনকি এ প্রক্রিয়া চলাকালীন ডিস্কটি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে পরবর্তীতে গ্রহে পরিণত হয়।
নতুন এ গবেষণায় বিভিন্ন গ্রহের গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন দিক খুঁজে পেতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার’-এর গবেষক দল। আর যেসব তথ্য বেশিরভাগ সময় উপেক্ষিত ছিল যেমন- নতুন গ্রহগুলো কী ধরনের আকার নেয়? সে বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টিপাত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
“আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রহের গঠন নিয়ে গবেষণা করছি। তবে এর আগে আমরা কখনোই ভাবিনি যে, গ্রহের গঠন সিমুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। অথচ আমরা সবসময় ধরে নিয়েছি যে গ্রহগুলো গোলাকার,” বলেছেন এই গবেষণার সহ-গবেষক ড. দিমিত্রিস স্ট্যামাটেলোস।
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, গ্রহগুলো ‘ডিস্ক ইনস্ট্যাবিলিটি’ পদ্ধতির মাধ্যমে গঠিত হলে এরা বাইরের দিকে সমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে না, বরং পুরো সময় একটি চ্যাপ্টা ডিস্ক আকারেই থাকে।
এ সময় গ্রহগুলো তাদের নিরক্ষরেখার চেয়ে বরং মেরুর দিকেই বিভিন্ন জিনিস জড়ো করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে খানিকটা চ্যাপ্টা গোলকার বা ‘ওব্লেট স্ফেরয়েড’ রূপ নেয়, যা গ্রহের চ্যাপ্টা ডিম্বাকৃতির অবস্থার ধরন। তবে শেষ পর্যন্ত এরা ঠিকই গোলকআকার রূপ ধারণ করে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।
তবে এগুলো এখন পর্যন্ত কেবল সিমুলেশন বা ধারণা। গবেষক দলটি বলেছে, নতুন গঠিত গ্রহ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে কোনো অদ্ভুত আকৃতি দেখা গেলে তা ‘ডিস্ক ইনস্ট্যাবিলিটি’ পদ্ধতি নিশ্চিত বা বাতিল করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স লেটার্স’-এ প্রকাশের অনুমোদন পেয়েছে নতুন গবেষণাটি।
আপনার মতামত জানানঃ