বিদ্যুতের ২০ হাজার মেগাওয়াট মাইলফলক স্পর্শে আলোক উৎসব এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্বের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার পরও দেশের গ্রামাঞ্চলে তীব্র লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ।
এপ্রিলের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং রোজার মধ্যে পরিস্থিতি যেভাবেই হোক নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রোজার পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এত বিদ্যুৎ কোথায় গেল?
গণমাধ্যমের খবর বলছে, তীব্র গরম শুরুর আগেই সারা দেশে বাড়ছে বিদ্যুৎ সংকট। বিশেষ করে জেলা উপজেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিং চলছে। কিছু জেলায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। বিদ্যুতের ঘাটতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেচের ওপর। সবগুলো বিতরণ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে।
এ মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়। অথচ ২০১৮ সালেই ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে তখন রাজধানীর হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো আলোক উৎসব। যদিও সরকারি হিসাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ৩০ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ মুহূর্তে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ১০০ ভাগ। গত বছরের ২১ মার্চ দেশের বৃহত্তম ১৩শ ২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কেন ৩০ হাজার মেগাওয়াট না হোক, অন্তত ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যাচ্ছে না? গত বছরের ১৯ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয় ।
কিন্তু এ বছর গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তার মানে আগামী মে জুন মাসে গরম আরও বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে এবং তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা হয়তো এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
গণমাধ্যমে খবর বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের চাহিদা আছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৯৯০ এমএমসিএফডি। যে কারণে দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ এখন অলস বসে আছে। গত শীতের পুরো মৌসুম তো বটেই, রোজা শুরুর পরেও গ্যাসের তীব্র সংকট ছিল। বাসাবাড়িতে সকাল ৮টার পরেই গ্যাস নেই, এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সস্তা মাধ্যম গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে রাষ্ট্রের কতটা নজর আছে? কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন বেশি আগ্রহ? উপরন্তু কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে কেন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না? কারণ ডলার সংকটের কারণে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের জ্বালানি ঠিকমতো কিনতে পারছে না সরকার।
অন্যদিকে দেশের ভেতর থেকে কয়লা উত্তোলনের যে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি করা কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। সুতরাং গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোর অন্যতম বিদ্যুৎ। সরকারের তরফেও এ নিয়ে শ্লাঘা প্রকাশ করা হচ্ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখন বিদ্যুৎ নিয়েই তারা সবচেয়ে বেশি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে। এমনকি এই ইস্যুতে নানাবিধ স্যাটায়ার ভিডিও কনটেন্টও তৈরি করা হচ্ছে।
স্মরণ করা যেত পারে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের পরে বিদ্যুতের ভয়াবহ পরিস্থতি মোকাবেলায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের অন্যতম একটি পদক্ষেপ ছিলো আইন করে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু এবং এই খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়া। তখন জেনারেটরের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দেয়া হয় এবং শিল্প কারখানার মালিকদেরও নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী বিদুৎ উৎপাদন করতে বলা হয়। শুধু তাই নয়, তারা চাইলে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবেন বলেও বিধান করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
যদিও বেসরকারি খাতের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারকে নানা ধরনের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় এর খরচ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়মুক্তি দেয়ার বিধানের কারণে। কেননা ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষবিধান) আইনকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয় এবং এই আইনের অধীনে গৃহীত কোনো কাজের বৈধতা সম্পর্কে আদালতের কাছে প্রশ্ন করা বা মামলা করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।
অর্থাৎ যারা বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন, তাদেরকে আগে থেকেই দায়মুক্তি দেয়া হয় এই বিশেষ আইনে। এভাবে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের আরও নানাবিধ পদক্ষেপে ২০২২ সালের ২১ মার্চ দেশকে শত ভাগ বিদ্যুতের আওতায় এনে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ট্র্যাজেডি হলো, শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণার ৬ মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে নাজেহাল হতে থাকে দেশের মানুষ। ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
বাস্তবতা হলো, চাহিদার তুলনায় যে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না, তার বড় কারণ গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং মজুতও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। তার বিপরীতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরেও যেরকম তৎপরতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান করার কথা ছিল, তা হয়নি।
বরং এলএনজি আমদানির প্রতি সরকারের বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। তার পেছনে একটি যুক্তি দেয়া হয় যে, গ্যাস অনুসন্ধান করলেই যে পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রমে খরচ করা অর্থ পুরোটাই অপচয় হতে পারে, আবার গ্যাস পাওয়া গেলে বিপুল লাভও হতে পারে।
সরকার সেই ঝুঁকিটা নিতে চায়নি বা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তারা বিদ্যমান গ্যাস দিয়ে যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাকিটা তেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এবং এলএনজি আমদানি করে মোকাবেলা করতে চেয়েছে।
কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে যদি অব্যাহতভাবে গ্যাস অনুসন্ধান করা হতো তাহলে এতদিনে অন্তত একটি নতুন ক্ষেত্রও হয়তো আবিষ্কৃত হতে পারতো। কারণ বাংলাদেশের মাটির নিচে যে গ্যাস রয়েছে, সে কথা প্রমাণিত। সুতরাং যেসব জায়গায় সম্ভাবনা বেশি, সেসব জায়গায়ও গভীর অনুসন্ধান করা হয়নি।
এমনকি সাগরের মীমাংসিত ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং সরকার নিজের করা টেন্ডারও বাতিল করেছে। সাধারণত গ্যাস অনুসন্ধানের বৈশ্বিক সাফল্যের হার প্রতি সাত কূপে একটি। কিন্তু বাংলাদেশে এ অনুপাত প্রতি তিন কূপে একটি। গ্যাস অনুসন্ধানে প্রায় দ্বিগুণ সাফল্যের হার থাকা সত্ত্বেও দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজ সেভাবে শুরু হয়নি।
এসবের পেছনে সরকারের টাকা খরচ করতে না চাওয়া এবং এলএনজি আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের প্রভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এখন যখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গেছে এবং মানুষকে আবার মোমবাতি ও হারিকেনের যুগে ফিরতে হবে কি না এমন প্রশ্ন উঠছে, তখন সরকার বা নীতির্ধারকরা ঠিকই গ্যাস অনুসন্ধানের বাস্তবতা উপলব্ধি করছেন।
বাস্তবতা হলো, গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে চাহিদা তথা ব্যবহার বেড়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের বড় কোনো মজুদও আবিষ্কার না হওয়ায় পুরোনো ক্ষেত্রগুলোর উপরে বেশি চাপ পড়ছে, সেগুলোর উৎপাদনও কমে আসছে।
গ্যাসের উৎপাদন কম হওয়ায় শুধু যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এর প্রভাব পড়ছে তাই নয়, অনেক দিন ধরেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, সেখানেও তীব্র সংকট। রাজধানী এবং আশেপাশের নাগরিকদের এটা এখন খুব সাধারণ অভিযোগ যে, সকাল ৮টার পরে, আবার কোথাও ৮টার মধ্যে গ্যাস চলে যায়। আসে বিকেলে।
মানুষের রান্নাবান্নার কাজে যখন সবচেয়ে বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হয়, তখনই গ্যাস নেই। ফলে বাধ্য হয়ে মধ্য রাতে বা শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে হয়। শীতের মৌসুমে অধিকাংশ মানুষকে এই পরিস্থতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অথচ মাস শেষে দুই চুলার গ্যাসের বিল ঠিকই ১০৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ সেবা না থাকলেও পয়সায় মাফ নেই।
শুধু বাসা বাড়ি নয়, গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, কোনাবাড়ী, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের শিল্প-কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। দিনের একটা বড় সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। আবার গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কল-কারখানা চালু রাখা অনেক ব্যয়বহুল। তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বাসা বাড়িতে অনেকে বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবহার করেন।
কিন্তু যখন দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎ থাকছে না, তখন ওইসব চুলাও ব্যবহার করা যায় না। উপরন্তু বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবহার বাড়লে বিদ্যুতে আরও চাপ বাড়বে। তখন লোডশেডিংও বাড়াতে হবে। আবার এর ফলে গ্রাহকের বিদ্যুতের বিলও বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে পুরো গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে মানুষকে এখন একদিকে অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আবার সেই টাকা খরচ করেও তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, গত দুই দশকে কোনো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় আগামী ১০ বছরের মধ্যেই প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে যদি বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া না যায়, তাহলে বিভিন্ন খাতের শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহতেু আমাদের পুরো শিল্প অবকাঠামো গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তাই হঠাৎ করে গ্যাস সাপ্লাইয়ে সংকট দেখা দিলে সেটি অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
এই সবকিছুর একমাত্র সমাধান হচ্ছে নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো; নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধান জোরদার করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানো। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থাকলেও অনুসন্ধান কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। সাগর এলাকায়ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সেজন্য বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
এখন থেকে চেষ্টা করলে আগামী পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে নতুন কয়েকটি ভালো মজুদের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব নয়। সমতল ভূমি ও উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায়ও গ্যাসের অনুসন্ধান করা জরুরি।
বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, শুকিয়ে যাওয়া ও পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্রগুলো সংস্কার করার পাশাপাশি নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে আবিষ্কারের কর্মসূচিকে সরকারের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে নিয়ে আসা দরকার। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে ২০০৯ সালের পরে সরকার যেরকম অ্যাগ্রেসিভ ছিল, এখন গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে আবিষ্কারেও সেরকম জোরালো পদক্ষেপের বিকল্প নেই। বিকল্প যদি হয় আমদানি, তবে সেই বিকল্পের মাশুল গুনতে হবে জনগণকে, রাষ্ট্রকে। তারও চেয়ে বড় কথা, বিশ্ব পরিস্থিতির খারাপ হয়ে গেলে পয়সা দিয়েও গ্যাস পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে নিজের সম্পদই ভরসা। সেই সম্পদের বিপুল সম্ভাবনা যেহেতু রয়েছে, অতএব সেটিকে কাজে লাগাতে হবে।
নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য পয়সা খরচ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই অনুসন্ধানের নামে যেন আবার জনগণের পয়সার শ্রাদ্ধ না হয়। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেরকম উন্নয়ন প্রকল্প মানেই বিরাট অংকের লুটপাট বিষয়টা বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, সেরকম অনিয়ম ও লুটপাট যাতে না হয়, সেটি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এমনিতেই জ্বালানি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নানা গল্প ও ধারণা প্রচলতি আছে। ফলে গ্যাস অনুসন্ধানের নামে যাতে জনগণের পয়সা তসরুপ না হয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি এবং সর্বোপরি মানুষের জীবনমান যেহেতু এখন হুমকির মুখে, সুতরাং এই ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এটি এখন বাঁচামরার প্রশ্ন। অর্থাৎ গ্যাসের উৎপাদন ও মজুদ বাড়াতে না পারলে বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
আপনার মতামত জানানঃ