ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির পিএলসি’র বর্তমানে শাখা ৩৯৪টি। এটিএম বুথ রয়েছে ২১১২টি। প্রায় ২১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত ব্যাংকটি সুদমুক্ত ও কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক। সব সূচকেই দীর্ঘদিন দেশের শীর্ষে ছিল।
চার দশকের পথচলায় শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন, শিল্পায়ন, প্রবাসী সেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতির ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতিতে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে। অথচ স্বনামধন্য ব্যাংকটি এখন ডুবতে বসেছে। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, সবার চোখের সামনে ডুবে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সবাই দেখছে ব্যাংকটি সঙ্কটে ভুগছে। এটাই সত্য, এর বাইরে কিছু নেই।
শুনেছি, গত কয়েক বছরে অপেশাদার লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাই ব্যাংক চালাচ্ছে। আর অপেশাদার লোক দিয়ে ব্যাংক চালালে বিপাকেতো পড়তেই হবে। জানা যায়, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ৭ বছরে প্রায় ১০ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার।
গত শনিবার পর্যন্ত আমানত ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। ধীরে ধীরে দেশের শীর্ষ ব্যাংকটি আস্থা হারাচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকেই এর শুরু। এদিন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন ঘটে। মালিকানায় আসে চট্টগ্রাম-ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ।
এই পরিবর্তনকে ‘নীরব অভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যা দেয় ব্রিটেনের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট। ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের পর থেকে ভেঙ্গে পড়েছে সুশাসন। মন্দ ঋণ, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ, ফান্ড ডাইভারশনসহ নানা ধরনের অনিয়মে বিপর্যস্ত ব্যাংকটি। ব্যাংকটিতে এখন অনিয়মই যেন নিয়ম।
নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে লোপাট হয়ে গেছে ব্যাংকটিতে গচ্ছিত গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা। এক সময়ে অন্যান্য ব্যাংক যখন আমানতের জন্য গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন তখন গ্রাহকরা আমানত রাখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন ইসলামী ব্যাংকে। এখন তারাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ব্যাংকটির তারল্য সঙ্কট নিয়ে ভাবতে হয়নি, সেই ব্যাংকটিই এখন বিভিন্ন দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারল্য সংগ্রহে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা নেয়ার পরও নগদ অর্থ সঙ্কটে ভুগছিল ইসলামী ব্যাংক।
পরবর্তীতে সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় ব্যাংকটি। সেখান থেকেও এক হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বেসরকারিখাতে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটি। অবশ্য এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকিং নীতিমালা লঙ্ঘন করেই সুদের বিনিময়ে এই ঋণ নিয়েছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারের টাকা সময়মতো শোধ করা নিয়েও বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে বড় অঙ্কের জরিমানারও মুখোমুখি হতে হয়েছে ইসলামী ব্যাংককে। অবশ্য ঋণ অনিয়মের কারণে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনায় ইসলামী ব্যাংক। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার পর্যবেক্ষক বসিয়েও ব্যাংকটির উন্নয়ন ঘটাতে পারছেন না।
এর পেছনে সুশাসনের ঘাটতিকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সুশাসনের মূলে ব্যাংকটিতে অদক্ষ-অপেশাদার লোককে নিয়োগ ও প্রমোশন দিয়ে ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষতা, অনৈতিকতা, সুশাসনের অভাবের পাশাপাশি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী অযাচিত হস্তক্ষেপ।
সূত্র মতে, ব্যাংকটিতে গত কয়েক বছরে দেদারছে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অদক্ষ-অপেশাদার লোকদের। ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করতে হাজার হাজার নতুন কর্মী ও কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের সিংহভাগের বাড়ি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের জেলা চট্টগ্রামে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও প্রশ্নসাপেক্ষ। ক্ষেত্রবিশেষে নিয়োগের আগে
কোনো ধরনের পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পর্যন্ত করা হয়নি। এছাড়া ব্যাংকের প্রমোশনের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অনিয়ম উঠে এসেছে। ডজন খানেক কর্মকর্তার তথ্য ইনকিলাবের হাতে রয়েছে। যাদের অনেকেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার সঙ্গে কোনো না কোনো সময় সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
অনেককেই আবার একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে তুলে এনে নাটকীয় গতিতে পদোন্নতি দিয়ে বসানো হয়েছে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে। সূত্র জানায়, মালিকানা পরিবর্তনের পর গত ৭ বছরে ব্যাংকে হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। কারো কারো একলাফে ৩/৪টি পদোন্নতি। কেউ কেউ প্রতি বছর একটা করে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ব্যাংকিং পাড়ায় আলোচনার নাম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ব্যাংকটিতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদান করার পর তার সম্পর্কে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সততা, কাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
অথচ ব্যাংকিং একটি বিশেষায়িত খাত। এই পদের জন্য ব্যাংকিং সম্পর্কিত জ্ঞান ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ীই ন্যূনতম ১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এই পদের জন্য। যার লেশমাত্রই নেই আকিজ উদ্দিনের। অথচ তিনিই ব্যাংকের সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আকিজ উদ্দিন পটিয়া পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে পটিয়া পৌরসভার মোহসেনা মডেল সরকারি প্রাইমারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে ওই বছর দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পটিয়া আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন। ১৯৯৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে পটিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন।
সেখান থেকে এইচএসসি ও স্নাতক পাস করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আরও পেশাগত ডিগ্রী অর্জন করেন। তার জন্ম ১৯৮১ সালের ৪ মে।
এতে দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণী থেকে এইচএসসি পাসের প্রতিষ্ঠান উল্লেখ থাকলেও স্নাতক বা অন্য ডিগ্রি কোথা থেকে নিয়েছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। অবশ্য ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা আকিজ উদ্দিনের অন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন।
এমনকি স্নাতক পাস করে ব্যাংকে কোন বছর বা কত বছর আকিজ উদ্দিন কাজ করছেন সে অভিজ্ঞতাও উল্লেখ নেই। অবশ্য তার ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন আছে সংশ্লিষ্টদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস আলম শিল্প গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একজন ইনকিলাবকে জানান, দেশের শীর্ষ ব্যাংকের ডিএমডি পদে এ রকম একজন ব্যক্তি। এটি ব্যাংকিংখাতের জন্য লজ্জাকর। তারা বলেন, ব্যাংকিং জ্ঞানই বলতে নেই; কিছুদিন একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস, সেখান থেকে ডিএমডি বনে গেলেন। তাও আবার দেশের শীর্ষস্থানীয় বা এক নম্বর ব্যাংকের। তাহলে ভবিষ্যতে ওই ব্যাংকের কি হাল হবে প্রশ্ন রাখেন তারা।
তবে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, তার কর্মদক্ষতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্ববোধে মুগ্ধ হয়ে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ তাকে তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে ২০২১ সালে তিনি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এভিপি হিসেবে পদোন্নতি পান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) এর তৎকালীন পি এস নজরুল ইসলাম কে সরিয়ে আকিজ উদ্দিন তার পি এস হন। এরপর থেকে আকিজের অভাবনীয় উত্থান! ওই আসনে বসেই গোপনে শুরু করেন জমির দালালী। সাইফুল আলম মাসুদের ভাগীনা মোস্তান বিল্লাহ আদিলের সঙ্গে যোগসাজশে হাজার হাজার কোটি টাকার জমি ক্রয় সংক্রান্ত দালালি করে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একজন জানান, এই আকিজ এস আলমের জুতা পরিষ্কার করা থেকে তার চুল আঁচড়ানোর কাজ করে প্রকৃতার্থে এস আলমের মনের ভেতরে ঢুকে যান। এভাবে ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে মূলত আকিজ উদ্দিনের হাতে।
একটি পক্ষের হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী থেকে শুরু করে বড় একটি গ্রুপকে মাসোহারা দেয়া হতো তার মাধ্যমে। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির অতি নিকটের মানুষ হিসাবে অঘোষিত সর্বেসর্বা বনে যান। যে কারণে তার বিরুদ্ধে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮/৯ টি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউই কথা বলার সাহস রাখে না। এই সুযোগে ব্যাংকের সকল নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
আর সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের মত বেসরকারি খাতের দেশ সেরা ব্যাংকের ডি এম ডি পদ বাগিয়ে নেয়। অথচ একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে ডিএমডি পদে আসতে হলে তার অন্তত ১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
অবশ্য শুধু আকিজ উদ্দিনই নয়; নির্ধারিত ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ছাড়াই চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার মিফতাহ উদ্দিন ডিএমডি পদোন্নতি পেয়েছেন। যা ব্যাংকের নীতিমালার লঙ্ঘন। তিনি ২০০৬ সালের মে মাসে ইসলামী ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। একই দিনে মিফতাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগদান করা ১৪১ জন কর্মকর্তা এখনও ইসলামী ব্যাংকে কাজ করছেন।
তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তারও মিফতাহ উদ্দিনের কাতারে যেতে হলে তাদেরকে ৫টি পদোন্নতি পেতে হবে! যা আগামী ১০ বছরেও সম্ভব হবে না।
এমন আরেক কর্মকর্তা হলেন ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ সাব্বির। সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হন ২০১৪ সালে। মালিকানা পরিবর্তনের দিনই তাকে পদোন্নতি দিয়ে বানানো হয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছর পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি।
দফায় দফায় পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালের আগস্টে তিনি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। মিফতাহ উদ্দিনের মতো মোহাম্মদ সাব্বিরকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক পরিচালনায় নির্বাহীদের মধ্যে প্রধান দায়িত্বে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এর পরে রয়েছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ এবং মো. আলতাফ হুসাইন।
এছাড়া উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মো. নায়ের আজম, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার, আবুল ফায়েজ মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, আকিজ উদ্দিন, কাজী মো. রেজাউল করিম এবং মিফতাহ উদ্দীন।
এই ১১ জনের অধিকাংশই প্রতিবছর পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ গত ৭ বছরে একবারও পাননি এ রকম কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অবশ্য এই ১১ জন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকলেও ব্যাংকের সার্বিক পরিচালনা বা কর্তৃত্বে করছেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দীন এবং মোহাম্মদ সাব্বির। এই তিনজনই ব্যাংকের সবকিছু। অন্যরা রুটিন কাজ বা হুকুম পালন করেন মাত্র।
ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র বর্তমানে শাখা ৩৯৪টি। এটিএম বুথ রয়েছে ২১১২টি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ২০ হাজার ৮৭৮ জন। গত শনিবার পর্যন্ত আমানত ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত প্রায় ১০ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে গত ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর।
২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার। যদিও ব্যাংকের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আরো ২শ’ নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে। যারা যোগদানের অপেক্ষায় আছেন।
অথচ প্রাথমিক স্তরের কর্মকর্তা নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে মাত্র একবার, তখন নিয়োগ হয়েছিলো ২০০ জন। বাকি সবার নিয়োগ অনানুষ্ঠানিকভাবে। এতে সনদ ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে এক হাজার জনের বেশি।
এদিকে নতুনদের যোগদান করানোর জন্য পুরনো কর্মরতদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলছে। গত ১৪ মার্চও ১৫৫ জনকে বয়সের আগেই জোরপূর্বক অবসরে বাধ্য করা হয়েছে। তাই সবাই আতঙ্কে আছেন কার কখন চাকরি যাবে। যদিও গত ৭ বছরে ৫শ’র বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্য ব্যাংকে চলে গেছেন। অনেকে স্বেচ্ছা অবসরে গেছেন।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস)। এটি একটি মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি। গ্রামের দুস্থ ও কর্মঠ নারী-পুরুষের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা করে আরডিএস।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর ৫-৬শ’ কোটি টাকার প্রফিট ব্যাংকের মূল আয়ে আসে। অথচ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের পদোন্নতি বন্ধ ৫ বছরের বেশি সময় ধরে। অবশ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের পক্ষে রায়ও পেলেও তাদের বকেয়া বেতনাদি তারল্য সঙ্কটের অজুহাতে পরিশোধ করছে না।
ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ইনকিলাবকে বলেন, নিয়ম-কানুন মেনেই পদোন্নতিসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরবেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে ব্যাংকিংই সর্ববৃহৎ আর্থিক খাত। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম-কেলেঙ্কারি দেখতে পাচ্ছি। ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাংক আগে যেভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে, এখন সেভাবে পারছে না।
এর মূল কারণ, এখানে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিবীক্ষণের যথেষ্ট ঘাটতি। সবচেয়ে সঙ্কটজনক বিষয় হলো সুশাসন-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার প্রচণ্ড অভাব। সূত্র: ইত্তেফাক।
আপনার মতামত জানানঃ