বৈশ্বিক জ্বালানি তেল রফতানিতে শীর্ষ দেশগুলোর একটি রাশিয়া। ২০২৩ সালে সৌদি আরবের পাশাপাশি এ খাতে নেতৃত্ব দিয়েছে দেশটি। বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে নিজের অবস্থান আরো সুসংহত করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সূচকগুলোয়ও উন্নতি দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার। যদিও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিতে রাশিয়ার পিছিয়ে পড়ার আভাস ছিল। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে প্রশ্ন উঠেছে, রুশ অর্থনীতি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে কি? সম্প্রতি ইউরো নিউজের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে।
এদিকে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনের ওপরও দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার একটি প্রভাব থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হতেই মস্কোর ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে পশ্চিমা বিশ্ব। এর আওতায় পড়ে আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রুশ সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অবশ্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শুরু ২০১৪ সালে যখন ক্রাইমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
ক্রাইমিয়া দখলের চেয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রস্তুত ছিল রাশিয়া। মূলত এ কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে মস্কো সামর্থ্য হয়। এতে প্রধান ভূমিকা রাখে জ্বালানি বাণিজ্য। আর্থিক ও জ্বালানি বাজারকে একীভূত করে চীনের মতো প্রাচ্যের মিত্রের দিকে ঝুঁকে, এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে পূর্ব সাইবেরিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইএসপিও) পাইপলাইন। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত প্রতিবেশীদের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারত্ব বজায় রেখেছে। এটি রাশিয়ার জন্য ইউরোপের সঙ্গে কিছু সমন্বয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করেছে।
রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে তা ১২ মাস বিলম্ব হয়েছিল। এটি রাশিয়াকে আরো প্রস্তুতির নেয়ার সময় দেয়। এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো শীর্ষ জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশ। এছাড়া গত বছর সৌদি আরব অপরিশোধিত তেল রফতানি কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়া আরো লাভবান হয়েছে।
ইউরেশিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্রো-অ্যাডভাইজরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার ওয়েফার জানান, বর্তমানে ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেলপ্রতি দাম ৮০ ডলারের বেশি। রাশিয়া মূলত জ্বালানি তেল ট্যাক্স থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয় করে, যা সামরিক শিল্প, সামাজিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে দেশটি। এছাড়া ডলারের বিপরীতে রুবলের ২০ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে জ্বালানি তেল রফতানি আয় বেড়ে যায়।
নিষেধাজ্ঞায় তালিকাভুক্ত রুশ পরিবারকে সহায়তা করতে বিপুল নগদ অর্থ দিচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। এছাড়া বাড়তি সৈন্য নেয়ার কারণে শ্রমিকের ঘাটতির দেখা দেয়ায় চাকরি পাওয়া সহজ হয়েছে, কমেছে বেকারত্ব। বেশির ভাগ শ্রমিকের মজুরি ২০ শতাংশ বেড়েছে। এটি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
ক্রিস্টোফার ওয়েফার বলেন, ‘পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট ঘাটতি রাশিয়ার জন্য এখন আর কোনো সমস্যা নয়। কারণ পশ্চিমা পণ্যের বিকল্প হিসেবে রুশ পণ্য প্রতিস্থাপিত হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রচারণা সব রুশ বিশ্বাস না করলেও অন্তত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তা মেনে নিয়েছে। এছাড়া দেশটিতে সব ধরনের প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপাতত এ পরিস্থিতি স্থায়ী হতে পারে। তবে রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্য ও পরিমাণ বা জ্বালানি তেলের বাজারের অবনতি রাশিয়াকে ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য করতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ