সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে উভয় সরকারের মাথাব্যথা না থাকলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারত সম্পর্কে বিরূপ ধারণা ক্রমেই বাড়ছে। সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিতর্কিত ‘শ্যুট-অন-সাইট’ নীতি দীর্ঘ দিন থেকেই অনুসরণ করে আসছে। ফলে বিএসএফকে কারণে-অকারণে বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করার অবাধ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগ, হাট-বাজারে কেনাকাটার জন্য অনেক মানুষের সীমান্ত পারাপার জরুরি হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে কৃষিজমিতে কৃষিকাজ বা নদীতে মাছ ধরার জন্যও অনেক মানুষকে সীমান্ত পেরুতে হয়। এসব ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবেই দেখা হয় সীমান্ত এলাকায়। এমতাবস্থায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ‘দেখামাত্র গুলি’র ক্ষমতা চর্চা বন্ধুত্বের সম্পর্কের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তবে অসঙ্গতিপূর্ণ হলেও, বারবার ঘটছে এই ঘটনা। এবার কুড়িগ্রামের রৌমারীর ধর্মপুর সীমান্তে দিনে-দুপুরে গরু পাচারের চেষ্টাকালে গ্রামবাসীর সঙ্গে চোরাকারবারিদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশির আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার দুপুরে রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক ১০৫৭ সীমানা পিলারের কাছে এই ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে জব্বার মিয়া (৫২) উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে অন্যজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে, কাঁটাতারের বেড়া কেটে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় নবাব মিয়া (২৬) নামে এক যুবককে আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে দাঁতভাঙ্গা ক্যাম্পে জানালে তাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিজিবি। এরপর রৌমারী থানায় মামলা দায়ের করে ওই যুবককে থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। আটক নবাব মিয়া ধর্মপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে বলে জানা গেছে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাজাহান আলী জানান, দুপুরে সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা সীমান্তের ১০৫৭ নম্বর পিলারের কাছে নোম্যান্সল্যান্ডে পতিত জমিতে গরু-ছাগল চড়াচ্ছিলেন। তখন একদল গরু চোরাকারবারি সীমান্তের কাছে ভারতের ব্রিজের নিচ দিয়ে গরু পাচার করতে গেলে স্থানীয়রা তাদের গালিগালাজ করে বলেন- ‘তোদের (চোরাকারবারি) জন্য সীমান্তে অশান্তি হয়।’
এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে ধারালো কাঁচির আঘাতে সহিদুর রহমান (৩২) নামে একজন আহত হন। এ দৃশ্য ভারতের আসাম রাজ্যের মানকারচর থানার কুহুরমারা ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যদের চোখে পড়লে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। সেই সঙ্গে ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটান।
ওই সময় বিএসএফের ছোড়া একটি গুলি জব্বার মিয়া নামে এক বাংলাদেশির পিঠে বিদ্ধ হলে তাকে বাড়িতে নেয়া হয়। এছাড়া আরও একজনের কানে গুলি লাগার কথা শোনা গেলেও তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান জানান, বিজিবি বাদী হয়ে আটক নবাব মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আসামিকে কুড়িগ্রাম আদালতে পাঠানো হবে।
আপনার মতামত জানানঃ