অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় তৈরি বিতর্কিত রামমন্দির উদ্বোধনের কয়েকদিন পরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘মহাভারতে পাণ্ডবদের কাছ থেকে পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিল কৃষ্ণ। আর হিন্দুরা তাদের আস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনটি জায়গা চাইছে শুধু।’
কয়েক দশকের আইনি বিবাদের পর অযোধ্যার জমি নিয়ে মামলায় হিন্দুদের পক্ষে রায় দিয়েছিল ভারতের শীর্ষ আদালত। বাবরি মসজিদের সেই বিতর্কিত জমিতে তৈরি হয়েছে বিশাল রামমন্দির। এরই মাঝে সাম্প্রতিককলে আবার নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে। এ আবহে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিততে কাশী এবং মথুরার মসজিদ নিয়েও বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার। যার ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এর আগে হিন্দুপক্ষের দাবি মেনে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদের একটা নির্দিষ্ট অংশে পুজা পাঠের অনুমতি দিয়েছিল আদালত। পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এ নিয়ে মামলা হয়। তবে একইভাবে হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে পুজার ওপর স্থগিতাদেশ দেয়নি উচ্চ আদালত। এরই মাঝে গত ১ ফেব্রুয়ারি জ্ঞানবাপীর বেসমেন্টে পুজাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এদিকে সম্প্রতি একটি আরটিআই-এর জবাবে আর্কেওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আগে মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদের জায়গায় কাটরা কেশবদেব মন্দির ছিল। দাবি করা হয়, ব্রিটিশ শাসনকালে গণপূর্ত বিভাগ বিল্ডিং এবং সড়ক বিভাগকে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৯টি স্মৃতিস্তম্ভের একটি তালিকা সরবরাহ করেছিল। তালিকায় কাটরা কেশবদেব শ্রীকৃষ্ণ ভূমি ৩৭ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, আগে কাটরা টিলায় কেশব দেবের মন্দির ছিল। অর্থাৎ, এভাবেই ভারতে একের পর এক মসজিদ ভেঙে মন্দির গড়ার পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার।
ভারতে হাজার বছরের বহুমাত্রিক সমাজের ঐতিহ্য ও রেওয়াজ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভারতবর্ষে বহু ধর্ম, জাতি, ও নৃগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের ধর্মবিশ্বাস, ভাষা, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার ঐতিহ্য একটি অপরটি থেকে পৃথক। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত বহু শতবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও যুবা প্রাণ হারিয়েছেন। এতদসত্ত্বেও সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে। ইন্দো-মুসলিম সভ্যতা নির্মাণে বৃহৎ দুই ধর্মাবলম্বীর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি মুসলিম জনগণ যে ত্যাগ ও কোরবানি দেন তা ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে উৎকীর্ণ রয়েছে। ভারত প্রায় ৭৬৬ বছর মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। বর্তমান শতকের ভারতে এখন সেই পর্বটাকেই ম্লান করে দেয়ার সচেতন প্রয়াস লক্ষণীয়।
আর স্পষ্টতই এর পেছনে আছে ধর্মীয় বিষোদগার ও ক্ষমতার রাজনীতির সমীকরণ। ভারতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমেই। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পড়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দ্বারা জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হতে পারে। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
আপনার মতামত জানানঃ