তাপগতিবিদ্যার নিয়ম ছাড়া পদার্থবিজ্ঞানে আর কোন বাধা নেই, সময়ের উল্টোদিকে চলার জন্য। বরং কিছু কিছু ব্যাপার দেখলে মনে হয়, সময়ের পিছন দিকে চললে কোনো সমস্যা হতো না। ছোট বেলায় পদার্থবিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছিলাম, নভোটেলিস্কোপগুলো নাকি উলটো চেহারা দেখায়। যে টেলিস্কোপগুলো দিয়ে আপনি পৃথিবীর কোনো বস্তু পর্যবেক্ষণ করবেন, সেই টেলিস্কোপে দুটি লেন্স থাকে।
কারণ টেলিস্কোপে অবতল-উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়, এতে ছবি উলটো হয়, অর্থাৎ কোনো মানুষকে যদি দূর থেকে টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে তার বাম হাতকে ডান হাত হিসেবে দেখবেন, আর ডান হাতকে দেখবেন বাম হাত হিসেবে; যেমনটা আমরা আয়নায় দেখি। তবে এই প্রতিবিম্ব শুধু উল্টোই হয় না, মাথা নিচের দিকে আর পা ওপরের দিকে হয়ে যায়।
এই সমস্যা দূর করার জন্য আরেকটা একই ধরনের লেন্স লাগানো থাকে। প্রথম লেন্স থেকে হাত ও মাথা ওল্টানো প্রতিবিম্ব দ্বিতীয় লেন্সে পড়ার পর আবার সোজা হয়ে সব ঠিকঠাক দেখায়।
তাহলে নভোটেলিস্কোপে কেন এই ব্যবস্থা থাকে না। কারণ মহাকাশের বস্তুগুলো দেখলে এদের ডান বামের পার্থ্যক্য বোঝার উপায় নেই। পা আর মাথার পার্থ্যক্য থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।
মহাকাশের বস্তুগুলোর চলাচলের গতি যদি পর্যবেক্ষণ করেন, তো সহজেই বোঝা যায়, এদের ঘূর্ণন বা চলার গতি উল্টো দিকে হলেও কোনো সমস্যা হতো না।
একটা সরল দোলকের ভিডিও করে যদি উল্টো দিকে চালান, কেউ বুঝবে না সেটা রিভার্স মুডে অর্থাৎ উল্টো দিকে চলছে। তেমনি কোনো নিখুঁত গোলকার বস্তুকে যেদিকেই ঘোরান, সেটা ভিডিও করে উল্টো করে চালান—কারও বোঝার সাধ্য নেই, সেটা উল্টো না সোজা ঘুরছে; সময়ের উল্টো দিকে ঘুরছে নাকি সামনের দিকের গতি ঘুরছে।
হ্যাঁ, মানুষ বা যেকোনো প্রাণীর, এমনকী গাড়ির চলার গতি যদি ভিডিও রিভার্স মুডে চালালে বোঝা যায় সেটা উল্টো দিকে চলছে। এই বোঝা যাওয়াতে আসলে আপনার আমার কী আসে যায়? ভিডিও সোজা করে চললে নাটক-সিনেমা বুঝতে সুবিধা হয়। উল্টো করে চালালে বুঝতে একটু কষ্ট হয়।
সেটা আমাদের হয়, কিন্তু প্রকৃতির কী আসে আসে যায়? প্রকৃতির কিছু আসে-যায় না। কণা লেভেলে অর্থাৎ কোয়ান্টাম জগতে সময়ের উল্টো চলার ব্যাপারটা অহরহ ঘটছে। কণা লেভেলে ডানবামের সাম্য আছে।
অর্থাৎ একটা কণা যেদিকেই ঘুরুক, উল্টো দিকে ঘুরলেও একই রকম দেখাবে। তাই কণাগুলি যদি সময়ের পেছন দিকেই চলে, এদের কোনো সমস্যা হয় না। অনেকের হয়তো বিশ্বাস হবে না, কণাদের সময়ের পেছন দিকে গিয়ে ঘটনা ঘটানোর ব্যাপারটা প্রায় শত বছর আগেই জানতেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে অনিশ্চয়তা নীতির কারণে।
অনশ্চিয়তার একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, শূন্যস্থান শূন্য নয়। শূন্যস্থানে লুকিয়ে আছে শক্তি। সেই শক্তিই জন্ম দেয় একজোড়া কণা আর প্রতিকণার। সেই কণাগুলো জন্মের পরপরই পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আবার ধ্বংস হয়ে যায়। জন্ম হয় শক্তির। সেই শক্তি থেকেই আবার কণা আর প্রতিকণার জন্ম হয়। এভাবে শূন্যস্থানে শক্তি আর কণার ভাঙাগড়ার খেলা চলতেই থাকে অবিরাম।
এখানে একটা ব্যাপার সময়ের পেছন দিকে ঘটে। কণারা জন্মের পর পর সময়ের পেছন দিকে গিয়ে আবার পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে। এভাবে অনবরত কণা আর প্রতিকণাদের সংঘর্ষ হচ্ছে শূন্যস্থানের ভেতর। তবে এই কণাদের অবশ্য সত্যিকারের কণা বলা চলে না। এদেরকে বলে ভার্চুয়াল কণা। কেবল মাত্র ব্লাকহোলের ঘনটদিগন্ত রেখায় গিয়ে এরা সত্যিকারের কণা হিসেবে জন্ম নিতে পারে।
প্রতিকণারা কোথায় গেল—এমন একটা প্রশ্ন ছিল এবং আজও আছে পদার্থবিজ্ঞানে। এর একটা সমাধানের কথা বলেছিলেন মার্কিন পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান। তিনি মনে করতেন, প্রতিকণারা সময়ের উল্টো দিকে চলে। আমাদের মহাবিশ্বে সময় সব সময় সামনের দিকেই চলে। কিন্তু মহাবিস্ফোরণের পর সময় দুই দিকেই চলা অসম্ভব।
মহাবিশ্বের সময়ের প্রবাহকে যদি ধনাত্মক ধরি, তাহলে বিগ ব্যাংয়ের পর এর বিপরীত দিকেই যদি সময়ের প্রবাহ ঘটে, সেই দিকে ছুটে যায় প্রতিকণারা, তাহলে কণা আর প্রতিকণাদের সংঘর্ষ ঘটার সুযোগ থাকে না।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী মিচিও কাকু তাঁর ফিজিকস ইন ইমপসিবল বইয়ে বলেছেন, ‘প্রতিকণারা সময়ের উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়ে একটা প্যারালাল ইউনিভার্স তৈরি করেছে। সেই মহাবিশ্ব সম্পূর্ণরূপে প্রতিকণা দিয়ে তৈরি।’
আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাঁর বিখ্যাত বই ‘দ্য ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের ‘সময়ের তির’ অধ্যায়ে বলছেন, ‘অন্যভাবে বলা যায় অন্য একটি গ্রহের অধিবাসীরা যদি আমাদের দর্পণ প্রতিবিম্ব হয় এবং যদি পদার্থ দিয়ে গঠিত না হয়ে বিপরীত পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়, তাহলেও তাদের জীবন একই রকম হবে।’
অর্থাৎ কণারা যে সময়ের উল্টো দিকে চলতে সক্ষম সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সচেতন। এমনকী বেশকিছু পরীক্ষাও হয়েছে এ নিয়ে।
২০২২ সালে একটা গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখানো হয়, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সিস্টেমগুলি সময়ের সামনে ও পেছনে উভয়দিকেই যাতায়াত করতে পারে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় কমিনিউনিকেশন ফিজিকস জার্নালে। এ গবেষণাটি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের গবেষক গুইলিয়া রুবিনো।
মহাবিশ্ব যদি আবদ্ধ সিস্টেমর মতো হয়, তাহলে মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে থাকবে।
কিন্তু পুরো মহাবিশ্বটাই যদি একটা আবদ্ধ সিস্টেম না হয়, তাহলে কি এনট্রপি একই আচরণ করবে? বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, মহাবিশ্ব আদৌ বিশাল এক আবদ্ধ সিস্টেম কিনা। বরং এনট্রপির যে নিয়ম, সেটা ছোট ছোট আবদ্ধ জায়গায় কাজ করে—বিচ্ছিন্নভাবে আলাদা সিস্টেমে, যেখানে তাপীয় বিশৃংখলা পরিমাপ করা যায় সহজেই।
কিন্তু মহাবিশ্বও কি একটা বিশাল অথচ বিচ্ছিন্ন আবদ্ধ সিস্টেম? মহাবিশ্ব যদি একটা বাঁকানো লুপের মতো হয়, কিংবা একটা বলের মতো গোলাকার চেহারার হয়? তাহলে গোটা মাহবিশ্বের এনট্রপি কখনোই কমবে না। কিন্তু অন্যকোনো চেহারার হলে মোট এনট্রপি নাও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সময়ের একমুখি প্রবাহের ব্যাপারটাও পুরো মহাবিশ্বের জন্য সত্যি নাও হতে পারে।
রুবিনো একটা থট এক্সপেরিমেন্টের কথা বলেছেন। ধরা যাক, খুব বড় একটা পাত্র, হতে পারে সেটা একটা জাহাজের খোল। খোলটি মাঝখান থেকে দুভোগে ভাগ করা; বায়ুরোধী দেয়াল দিয়ে। মাঝখানে একটা ভালভ আছে। ধরা যাক, জাহাজ-খোলের অর্ধেক অংশ এক নির্দিষ্ট গ্যাসে ভর্তি। অন্য অংশটা পুরো শূন্য, অর্থাৎ বায়ুশূন্য।
এবার যদি মাঝখানের ভালবটা খুলে দেওয়া হয়, তবে প্রথম অর্ধেক খোল থেকে গ্যাস চলে আসবে দ্বিতীয় অর্ধে। পুরো খোলের ভেতর গ্যাসের পরমাণুগুলি অবাধে চলাচল করবে। একসময় পুরো খোল সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে পরমাণুগুলি। একবার ছড়িয়ে পড়লে এদের পক্ষে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব নয়। যদিও এভাবে আবার একই অর্ডারে সজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা একদম শূন্য নয়।
বিন্যাস যদি ১ কোটি রকমের হয়, তাহলে প্রতি এক কোটি বারে একবার সম্ভব আগের অবস্থায় ফিরে আসা। কিন্তু ‘এনট্রপি কী’ অধ্যায়ে আমরা দেখেছি পরমাণুর সংখ্যা যত বেশি, তত বেশি রকমের সজ্জা তৈরি হওয়া সম্ভব। পরমাণুর সংখ্যা যদি খুব কম হয়, ধরা যাক, মাত্র তিনটি পরমাণু আছে ওই গ্যাসে। তাহলে ওই কণাদের পক্ষে সম্ভব হতো আবার শুরু অবস্থায়, শুরুর সজ্জাতে ফিরে আসা।
রুবিনোর ভাষ্য হলো, বড়দের জগতে সম্ভব না হলেও খুদে কণাদের বাধা নেই সময়ের সামনে বা পেছনে চলতে।
কোয়ান্টাম মেকানিকস বলে, কোয়ান্টাম জগতে খুদে কণারা থাকে কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে, একইসঙ্গে এরা কণা ও তরঙ্গরূপে। পর্যবেক্ষক যখন যে ভাবে এদের দেখতে চান, কণারা সেভাবে ধরা দেয়। রুবিনো আর তাঁর দল এমন এক সুপারপজিশন দেখেছিলেন, যেখানে কণারা সময়ের সামনে ও পেছনে উভয় দিকেই চলতে পারে, সেটা এনট্রপি পরিবর্তনের ফলেই? তার মানে কোয়ান্টাম লেভেলে এনট্রপি সামনে ও পেছনে উভয় দিকেই চলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার ক্লেমসন ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রামকৃষ্ণ পোড়িলার মতে, একটি বা দুটি কণার জন্য পরিসংখ্যান বলবিদ্যাকে যেভাবে কাজে লাগানো যায়, বহু কণাদের ক্ষেত্রে সেটা একই ভাবে কাজ করে না। বিচ্ছিন্ন একটা কণার নিজস্ব অনন্য স্বত্তা থাকে, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়ম মেনে আচরণ করে এরা।
আমরা ভৌত বাস্তবতা বোঝার আগেই সময়ের জন্য তত্ত্ব নির্মাণ করে করে ফেলেছি, আর তাতেই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে—এমনটাই মনে করেন পোড়িলা। সময়ের তীরকে এনট্রপি অর্থাৎ তাপগতিবিদ্যার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে, ঠিক এসব কারণেই সময়ের পেছনে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না—এই তত্ত্বও আসলে শতভাগ নিশ্চিত নয়। তবে নিঃসন্দেহে এটা জনপ্রিয় তত্ত্ব। এমনকী সময় যে সামনে এগিয়ে চলেল—এটাও কিন্তু স্বতঃসিদ্ধ নয়।
এনট্রপি যাই বলুক, সময় আসলে কণা লেভেলে পেছনের দিকে চলতে পারে, এর প্রমাণ আরও আছে। ২০০১ সালে এমনই এক পরীক্ষা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ডেনিস এভান্স আর তার সহকর্মীরা। তাঁরা খুবই ছোট্ট আঠার বল ব্যবহার করেছিলেন এ পরীক্ষায়।
বলটি পানিতে ভাসমান অবস্খায় রেখে তার ওপর লেজার রশ্মি দিয়ে আঘাত করেছিলেন। এ রশ্মিকে তাঁরা ব্যবহার করেছিলেন অপটিক্যাল টুইজ্যারের মতো করে।
এখন, প্রশ্ন হতে পারে, অপটিক্যাল টুইজারটা আবার কী জিনিস?
কোনো হালকা বস্তুকে কোথাও আটকে স্থির রাখার জন্য লেজার রশ্মি দিয়ে এক ধরনের ফাঁদ পাতা হয়। বস্তুটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে ফেলে লেজার রশ্মির আলোক ক্ষেত্র। ফলে বস্তুটি সেই ফাঁদে পড়ে পালিয়ে যাওয়া তো বটেই, সামান্য নড়াচড়াও করতে পারে না।
এই পরীক্ষায় আঠালো বলটি বাঁকানো পৃষ্ঠতল লেন্সের মতো কাজ করে। আলোর ফাঁদে আটকাপড়া সেই ছোট গোলকটির ওপর সামান্য বল প্রয়োগ করা হয়। তাপর ধীরে ধীরে সেই বলের সাহায্যে পানির ভেতরে গতিশীল করা হয় গোলকটিকে।
চিরায়ত গতিবিদ্যা অনুযায়ী পরীক্ষাটা যতবারই করা হোক, এক রকম ফল পাওয়া উচিৎ প্রতিবারই। অর্থাৎ আলোর রশ্মিকে অনুসরণ করে চলাচলা করা উচিৎ ছিল প্রতিবারই। কিন্তু কয়েক শবার পরীক্ষাটির পুরাবৃত্তি করে দেখা গেল, মাঝে মাঝে গোলকটি লেজার রশ্মিকে অনুসরণ করছে। মাঝে মাঝে তাকে পেছনে রেখেই এগিয়ে চলছে লেজার রশ্মি।
এ কাজটি ওই গোলকটি করছে আশপাশের তাপ গ্রহণ করে। ফলে নিজে লেজার রাশ্মির ফোকাস থেকে সরে যেতে পারছিল সহজেই। অর্থাৎ প্রাকৃতিক গতিবিদ্যিার বিরুদ্ধে কাজ করছিল গোলকটি।
মাত্র দুই সেকেন্ড স্থায়ী ছিল এই প্রক্রিয়া, তবুও এটা তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের লঙ্ঘন। মাইক্রোমিটার লেভেলে অবশ্য এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম ছিল না। ইভানস এরকম পরীক্ষা আরও করেছেন, ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে। তখন অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেবরা বার্নহার্ডকে নিয়ে ‘ফ্ল্যাকচুয়েশ থিওরেম’ দাঁড় করিয়েছিলেন।
এই তত্ত্ব দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যই ছিল পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা। এই থিওরেমেরে সারকথা হলো, ন্যানোস্কেলে তাপগতিবিদ্যার আচরণ একদম ভিন্ন, এ জগতের সব ঘঠনাই প্রভাবিত হয় চারপাশের অণুপরমাণুর দ্বারা।
অণু-পরমানু ধাক্কায় পুরো সিস্টেমটাই এলোমেলো হয়ে যায় সবসময়। এমনকী তাপগতিবিদ্যার সাধারণ আইনও এলোমেলো হতে পারে, তাই এনট্রপি সবসময় যে বেড়ে চলে, সে ব্যাপারটাও সবসময় খাটে না।
অর্থাৎ সেখানে সময়ের তীরও ঝাপসা হয়ে যায়, যে তির সবসময় একমূখি গতিতে চলছে, সেটাও মাঝে মাঝে ধাক্কা খায়; বিপরীত দিকেও চলতে পারে কণারা!
যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ফি বিশ্ববিদ্যালয়েল গবেষক ও তাপগবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডেভিড উলপোর্ট বলেন, আপনি যত ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর জগতে যাবেন, তাপগবিদ্যার বিপরীতমুখিতা দেখার সম্ভাবনা ততো বাড়বে। অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে সময়ের তির। কিন্তু স্টিটেমে অণু-পরমাণুর সংখ্যা যাত বাড়ে, তত সময়ের তির স্থিতিশীল হয়, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা এই ফ্ল্যাকচুয়েশন থিওরেমটাকে ঘষামাজা করছেন, যাতে নানা ধরনের কাজে একে ব্যবহার করা যায়। বিজ্ঞানীরা তাই বহুদিন ধরেই চেষ্টা করেছেন কোয়ান্টাম তত্ত্বের সঙ্গে এই ফ্ল্যাকচুয়েশন উপপাদ্যের সমন্বয় করতে।
তাপগতিবিদ্যার আইন লঙ্ঘন হয় এমন আরও অনেক পরীক্ষা পরিচালনা করছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতিগুলোতে এ ধরনের প্যারামিটারগুলো যুক্ত করা হচ্ছে।
মোদ্দা কথা হলো, কণা লেভেলে সময় মোটেও একমুখি আচরণ করে না, কণারা সময়ের পেছনের দিকেও চলতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ