অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩ হাজার ১৯৫টি শিশু নিহত হয়েছে। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে সংঘাতের কারণে যত শিশু নিহত হয়েছে, এ সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
কারণ, এখনো এক হাজার শিশু নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি বোমা হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাবে, ‘৭ অক্টোবর থেকে চালানো ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৩ হাজার ১৯৫টি শিশু নিহত হয়েছে, যা ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর সংঘাতে যতসংখ্যক শিশু নিহত হচ্ছে, সে সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেছে। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অনবরত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে গতকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে।
ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে ৩৩১ জন সেনা রয়েছেন।
এদিকে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা এবং পশ্চিম তীরে সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান চলতি সপ্তাহে গাজা থেকে মিশরে প্রবেশ দ্বার রাফাহ বর্ডার ক্রসিং পরিদর্শন করেছেন।
রোববার (২৯ অক্টোবর) মিশরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অপরাধের সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আইসিসির সক্রিয় তদন্ত চলছে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় সংঘটিত অপরাধ এবং পরে গাজা ও পশ্চিম তীরের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধের তদন্ত চলছে।
তিনি বলেন, গাজার জনগণের জন্য ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের অধীনে একটি অপরাধ হতে পারে। করিম ইসরাইলকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মৌলিক খাবার, ওষুধ সরবরাহ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে স্পষ্ট প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আইসিসির প্রসিকিউটর বলেন, আমরা নিরোপেক্ষভাবে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি দেখছি। আমরা ইসরাইলের ঘটনাগুলোও দেখছি। আমাদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের সাহায্য দরকার। তবে অভিযোগকে সত্য থেকে আলাদা করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প, সহনশীলতা এবং পেশাদারিত্ব থাকবে।
প্রসিকিউটর বলেন, শিশু, নারী ও পুরুষ, বেসামরিক মানুষের কাছে মানবিক ত্রাণ সরবরাহে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। তারা নির্দোষ। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে তাদের অধিকার রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে করিম খান জানান, তিনি গাজায় প্রবেশ করতে পারেননি। তবে তিনি এই অঞ্চলে থাকাকালীন গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইল পরিদর্শনে যাবেন বলে আশা করছেন।
উল্লেখ্য, আইসিসি ২০২১ সাল থেকেই অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ২০১৪ সাল থেকে চলা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করছে। ইসরাইল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। ইসরাইল এই আদালতের এখতিয়ার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির তদন্তের সঙ্গে জড়িত হয়নি।
যদিও করিম খান সম্প্রতি বলেছেন, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলা এবং পরে গাজা অঞ্চলে ইসরাইলি হামলার অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে তদন্তের এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ