তীব্র গ্যাস-সংকটের কারণে অলস বসে আছে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রায় অর্ধেক। সামনের দিনগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও পাঁচটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২ হাজার ৩৭১ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, বর্তমান সরবরাহের বাইরে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করার মতো অতিরিক্ত গ্যাসের সংস্থান করা সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব নয়।
জানা যায়, নতুন পাঁচটি বিদ্যুৎ- কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা ছিল গত ৩১ আগস্ট। পিডিবি ও তিতাস জানিয়েছে, গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদনে আনা সম্ভব হয়নি। নতুন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে সামিটের মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইউনিক গ্রুপের মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট। এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এ ছাড়া চলতি মাসেই উৎপাদনে আসার কথা ছিল ডুয়েল ফুয়েলে (গ্যাস বা ডিজেল) চলা বিপিডিবির খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১২ জুলাই পর্যন্ত এই কেন্দ্রের কাজ ৮১ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১৫৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ঘোড়াশাল ইউনিট-৩ রিপাওয়ারিং বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা আগামী ডিসেম্বরে।
তিতাস জানিয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উৎপাদনে আসার আগে সামিট ও ইউনিক গ্রুপের মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গ্যাস দিতে বলেছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এখন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ করছে। অন্যদিকে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইনের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি তিতাস।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা আছে ২ হাজার ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু সরবরাহ আছে অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ ১ হাজার ৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের সরবরাহ কীভাবে হবে, জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে গ্যাসের সংকট আছে। এই সংকটের মধ্যে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করছি। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুৎ দিতে হলে বর্তমানে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ আছে, সেখানে সরবরাহ কমাতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, দেশে গ্যাসের যে সংকট, সেটা অচিরেই যাচ্ছে না। ২০২৬ সালের আগে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব নয়।
পিডিবির বিদ্যুৎ পরিকল্পনা পরিদপ্তরের ১২ জুলাই প্রকাশিত তথ্যমতে, গ্যাসচালিত ৬৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। ৬৪টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে উৎপাদনে আছে ৩৭টি, যাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৮ হাজার ২২৮ মেগাওয়াট।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যমতে, গত ২২ আগস্ট গ্যাস-সংকটের কারণে আংশিক সক্ষমতায় চলে ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৮২৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সেদিন পিক আওয়ারে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮৭৯ মেগাওয়াট। অন্যদিকে গ্যাস দিতে না পারায় বন্ধ আছে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
পিজিসিবির তথ্যমতে, গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আংশিক উৎপাদনে চলছে বিপিডিবির মালিকানাধীন ২১০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার ঘোড়াশাল ইউনিট-৪। গত ২২ আগস্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৭০ মেগাওয়াট। সিদ্ধিরগঞ্জে ২১০ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রটিও গ্যাসের অভাবে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে চলতে পারছে না। গত ২২ আগস্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৯৮ মেগাওয়াট।
গ্যাসের সংকট জেনেও কেন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কেন নেওয়া হয়েছে, সেটার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। প্ল্যানিং বিভাগ বলতে পারবে।’
আপনার মতামত জানানঃ