উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে রয়েছে কত রহস্য। অনেকে একে শয়তানের ঘর বলেও ডাকেন। এবার এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে পানির নিচে পাওয়া গেল রহস্যময় বস্তু।
সম্প্রতি এক সমুদ্র পরিব্রাজক দেখতে পান এটি। বস্তুটি এলিয়েনের গাড়ি (মহাকাশযান) বলেই ধারণা তাঁর। আর তেমনটি হলে বলা যায়, ১০০ বছর আগেই পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছিল!
সমুদ্রে ঘুরে বিভিন্ন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখেন ড্যারেল মিলকোস নামের ওই ব্যক্তি। ২০১৮ সালে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের দিকে গিয়েছিলেন তিনি। সারমারসিবল যানে সঙ্গে ছিলেন নাসার নভোচারী গর্ডন কুমার। ওই সময় অদ্ভুত এক বস্তু দেখে ভড়কে যান তাঁরা। এটি একটি যান।
এবার সেই রহস্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছেন ড্যারেল মিলকোস। তাতে তিনি বলেন, সেই যানটি এলিয়েনের বলেই তাঁদের মনে হয়েছে। কেননা পৃথিবীর কোনো যানের সঙ্গেই এর মিল নেই। দেখলেই মনে হয়, পৃথিবীতে বানানো হয়নি এটি।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের পানির নিচে দেখতে পাওয়া ওই যান তুলে আনতে চান মিলকোস। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হতে পারে, এলিয়েন শত বছর আগেই পৃথিবীতে এসেছে। কেননা এসব যান প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।
এলিয়েনের বলে দাবি করা যানটি দেখতে বেশ অদ্ভুত। একটি যানের মধ্যে পাঁচটি হাত রয়েছে। দেখে মনে হবে, পাঁচদিকে পাঁচ বন্দুক তাক করা। এমন ১৫টি যান দেখা গেছে। জায়গাটা বাহামাসে।
সংবাদমাধ্যম লেডবাইবেল ডটকম বলছে, মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব যানের চারপাশে রয়েছে প্রবাল। এসব প্রবাল একেকটি প্রায় হাজার বছর আগে জন্মানো বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এবার চলুন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আবিষ্কার ও এর রহস্য সম্পর্কে জানা যাক। পঞ্চদশ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় যান তখনই তিনি সাগরে অদ্ভুত এলাকা লক্ষ করেন। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ১৪৯২ সালের ১১ ই অক্টোবর এই জায়গাটি নিয়ে তিনি অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন।
তিনি লিখেছেন তার জাহাজের নাবিকরা দূর থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অঞ্চলের দিকে আলোর নাচানাচি আর আকাশে ধোয়া দেখেছিল। আর তার কম্পাস এলোমেলো ছোটাছুটি করছিল। অদ্ভুত এই জায়গাটি প্রায় ৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে।
যদিও এই অঞ্চলের আবিষ্কারক কলম্বাস তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন লেখক ভিনসিয়েন্ট গ্যাডিস তার লেখা একটি কাহিনীতে ১৯৬৪ সালে। ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে আটলান্টিক মহাসাগরের নামহীন এক অদ্ভুত এলাকা নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। আর এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই গ্যাডীস লিখেছিল “The Deadly Bermuda Triangle” নামক কাহিনীটি।
যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে গিয়েছে তখন সেগুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদিও ফিরে আসে তবু মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার। এসব ঘটনার কারণ এই রহস্য যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে।
মারি সেলেস্ত নামের একটি মালবাহী জাহাজ ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে নিউইয়র্ক থেকে রওনা হয়। অনেকদিন পর যখন গন্তব্যে পৌঁছায় নি তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে সব মালপত্র খাবার-দাবার একদম অক্ষত ছিল শুধুমাত্র ১১ জন কর্মী উধাও।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায়। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখে উধাও হয়ে যায়। এর সাথে ৩০৬ জন ক্রু উধাও হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস আর ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ।
তবে জাহাজের ঘটনাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। ১৫ হাজার টন সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তে রওনা হয় জাহাজটি। ফেব্রুয়ারি ৪ থেকে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান করছিল হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায় অথচ কিছুক্ষণ আগেও কমাণ্ডার বলেছিলেন “)কত সুন্দর আবহাওয়া! কি চমৎকার ভাবে নেভিগেশন চলছে!” এভাবে হঠাৎ ৬০০ ফুটের এই জাহাজটি মানুষগুলোকে নিয়ে একদম নেই হয়ে গেল ।
এখন আসি বিমানের কথায়। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ফ্লাইট নাইনটিন নামক পাঁচটি বিমান নিখোজ হওয়া নিয়ে। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে শুরুর দিকে ইউএস নেভির সেরা পাঁচজন এভেঞ্জার বম্বার একটি প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য রওনা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল এ অবস্থান করছে এমন অবস্থায় বিমানগুলির সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই পাচটি বিমানের খোজ আজও পাওয়া যায় নি।
আপনার মতামত জানানঃ