পৃথিবীতে কটা মহাদেশ আছে। ছোট্ট বয়সে স্কুল স্তরের এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই সহজে দিয়ে দেবেন। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকা। কিন্তু সেই তালিকা এবার বদলে যেতে চলেছে। কারণ বিজ্ঞানীরা আরও ১টি নতুন মহাদেশের খোঁজ পেয়েছেন। যার নাম জিল্যান্ডিয়া।
প্রায় ৩৭৫ বছর পর পানির নিচে লুকিয়ে থাকা একটি মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। মহাদেশটির নাম জিল্যান্ডিয়া। বিজ্ঞানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ফিস ডট ওআরজির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এতে বলা হয়, সমুদ্রতলে ম্যাপিং, পাথরের নমুনা বিশ্লেষণ ও টেকটোনিক প্লেটের ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষার পর এ মহাদেশটির মানচিত্র প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা।
বহু বছর ধরে একেবারে চোখের সামনেই বিরাজ করছিল সে। অথচ চারিদিকে হন্যে হয়ে খোঁজ চলছিল তার। শেষ মেশ প্রায় পৌনে ৪০০ বছর পর ‘হারিয়ে যাওয়া’ মহাদেশ খুঁজে পেলেন ভূবিজ্ঞানীরা।
মহাসাগরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করা পাথরের নমুনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ধরে ‘হারিয়ে যাওয়া’ মহাদেশের সন্ধান মিলল, যার নাম রাখা হয়েছে Zealandia তথা Riu-a-Maui. পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ বলে গন্য করা হচ্ছে সেটিকে। চোখের সামনে থাকলেও, এতদিন তার খোঁজেই হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন বিজ্ঞানীরা।
মনে করা হয় ১ বিলিয়ন বছর আগে এই মহাদেশটি তৈরি হয়েছিল। যা ২ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে জলের তলায় অনেকটাই হারিয়ে যায়।
বিজ্ঞানীদের দাবি, গন্ডোয়ানা ল্যান্ড থেকেই এই জিল্যান্ডিয়া নামে মাইক্রো কন্টিনেন্ট-এর সৃষ্টি। ৩৭৫ বছর পর এই মহাদেশটির ফের খোঁজ মিলল বলেও জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এই ৩৭৫ বছর এটি হারিয়ে গিয়েছিল।
টেকটোনিক্স জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৩৭৫ বছর ধরে সেটি নিখোঁজ ছিল বলে জানা গিয়েছে। মহাদেশটির আয়তন প্রায় ৪৯ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনে মাদাগাস্কারের চেয়ে প্রায় ছ’গুণ বড়।
এতদিন পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ ছিল, এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আন্টার্কটিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া। এবার তাতে সংযুক্ত হল জিল্যান্ডিয়া। আয়তনে এটিই সবচেয়ে ছোট, সরু এবং কনিষ্ঠও।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জিল্যান্ডিয়া ১ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল আয়তনের একটি বিশাল মহাদেশ। এটি আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের থেকে প্রায় ছয় গুণ বড়। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এ মহাদেশটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন মহাদেশটির প্রায় ৯৪ শতাংশই পানির নিচে। এখানে নিউজিল্যান্ডের মতো কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে।জিল্যান্ড মহাদেশ আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত থাকা নিউজিল্যান্ডের ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউট জিএনএস সায়েন্সের ভূ-বিজ্ঞানী অ্যান্ডি তুলোচ বলেন, একটি স্পষ্ট বিষয় উন্মোচিত হতে কখনো কখনো যে অনেক সময় নিতে পারে, জিল্যান্ডিয়ার আবিষ্কার তার একটি উদাহরণ।
গবেষকরা বলছেন, জিল্যান্ডিয়া প্রায় ৫৫ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা নামের একটি বৃহৎ মহাদেশের অংশ ছিল। গন্ডোয়ানা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এটি পানির নিচে তলিয়ে যায়।
আপনার মতামত জানানঃ