মঙ্গল গ্রহকে এখন নিষ্ফলা বরফছাওয়া মরুভূমি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশীর পৃষ্ঠে কখনো কি প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? এটি এমন একটি প্রশ্ন, যার উত্তর বহু শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন। এ নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি রচিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ৪০০ কোটি বছর আগে দুটি গ্রহেই জীবন প্রতিপালনের সম্ভাবনা লক্ষ করা যায়। তবে মঙ্গলের মধ্যবর্তী ইতিহাস প্রহেলিকাময়।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলের রহস্য ভেদ করতে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন এই গ্রীষ্মে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করছে। অবশ্য মঙ্গলে প্রাণের অনুসন্ধান করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে না তারা। কারণ, সেখানে এখন কিছুই টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই। তবে অতীতের জীবনরূপের সম্ভাব্য যদি কোনো চিহ্ন সেখানে পাওয়া যায়, সেটাই অনুসন্ধান করা হবে।
এই বিশাল ও ব্যয়বহুল প্রোগ্রামগুলো বৃথা প্রমাণ করতে পারে। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা খুঁজে পেতে লাল গ্রহটি নিয়ে এখনো আমাদের অনেক আশা।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে ঋতু বদলের পরিক্রমায় আসে বিভিন্ন মৌসুম। আর এর সঙ্গে রয়েছে পানি। সব মিলিয়ে পৃথিবী প্রাণীর বসবাসের জন্য উপযুক্ত এক গ্রহ।
তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, অতীতে কোনো এক সময় মঙ্গল গ্রহেও বিভিন্ন মৌসুম ছিল। ফলে সে সময় হয়তো বসবাসের যোগ্য ছিল লাল এই গ্রহ।
বিজ্ঞানীরা এ ধারণার কথা বলেছেন মঙ্গলে মাটিতে ফাটলের ধরন বিশ্লেষণ করে। গ্রহটিতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার যান ‘কিউরিওসিটি’ ওই ফাটলের ছবিগুলো সামনে এনেছে। ফাটলগুলো দেখে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডার বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলে পানি ছিল। পরে তা বাষ্প হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়া কোনো এক সময় নিয়মিত হয়েছে নয়তো অনিয়মিতভাবে ঘটেছিল। এর জেরেই ফাটলগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
মঙ্গলের মাটির ফাটল নিয়ে চালানো গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিজ্ঞানী নিনা লানজা। তিনি বলেন, মঙ্গলের মাটির এই ফাটলগুলো পর্যবেক্ষণ করে যা পাওয়া গেছে, তা গ্রহটিতে পানি থাকার অজানা ইতিহাস সামনে এনেছে।
এককালের উষ্ণ ও ভেজা গ্রহ থেকে মঙ্গল কীভাবে আজকের শীতল ও শুষ্ক গ্রহে পরিণত হলো, পরিবর্তনের সেই সময়টি আমাদের কাছে তুলে ধরেছে ফাটলগুলো। সে সময় মঙ্গলে তরল পানি ছিল, হতে পারে তা খুব কম পরিমাণে।
বিজ্ঞানবিষয়ক জনপ্রিয় সাময়িকী নেচার এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীতে মাটির ফাটলগুলো একসময় ইংরেজি বর্ণ ‘টি’ এর আকৃতির ছিল বলে ধারণা করা হয়। গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির মৌসুমের চক্রের কারণে এই ফাটলগুলো অনেকটা ‘ওয়াই’ আকৃতিতে রূপ নিয়েছে।
মঙ্গলের ওয়াই আকৃতির ফাটলগুলোর অর্থ এটা হতে পারে যে গ্রহটিতে একসময় পৃথিবীর মতো গরম ও বৃষ্টির মৌসুম ছিল। আর মঙ্গলে ফাটলগুলো ভূপৃষ্ঠের মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার নিচে। ফলে বোঝা যায়, সেখানে মৌসুমের পরিবর্তন খুব দ্রুত হতো। সব মিলিয়ে এটাই সামনে আসছে, মঙ্গল কোনো এক সময় প্রাণীদের বসবাসের যোগ্য ছিল।
এসডব্লিউএসএস/১৭২৫
আপনার মতামত জানানঃ