সমুদ্রের দীর্ঘ ইতিহাসে যে বহু প্রাচীন সভ্যতার ছিল ভালো নেভিগেশন এবং নৌকা চালানের দক্ষতা ছিল, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। প্রাচীন অনেক সভ্যতাই বহু মাত্রার উপকূলবর্তী রাস্তা নির্মাণ করে মশলা, সোনা, সিল্ক এবং অন্যান্য পণ্য বিনিময় করেছিল। খুজে পাওয়া আর্কিওলজিক প্রমাণ থেকে জানা গেছে যে মহান এনটিক জাহাজগুলো সাগর জুড়ে দাপিয়ে বেরিয়েছে এবং বেশ সাহসিকতার সাথেই খোঁজ করেছে এমন অসংখ্য অঞ্চলে যেখানে আগে কখনও কেউ পা রাখেনি।
যাইহোক নৌকা আধুনিক মানুষ সৃষ্টি করেনি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা দাবি করে যে, ৪,০০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে থাকা নিয়ান্ডারথালরাই পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নৌকাবিদ ছিলেন। বিজ্ঞানীরা ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দ্বীপসমূহে পাওয়া বেশকিছু উপকরণ এবং পাথরের সরঞ্জাম বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
দক্ষিণ শিখরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে মধ্য প্রত্নপ্রস্তরযুগীয় উপকরণগুলো এটাই প্রমাণ করে যে যে মানুষ ১১০ হাজার বছর আগে থেকে সেখানে বসবাস করত। তবে বাথিমেট্রি, সমুদ্রের স্তরের পরিবর্তন এবং লেট কোয়াটার্নারী জীববৈচিত্র্য প্রমাণ করে যে উক্ত সময়ে কেফালিনিয়া এবং জাকিন্থোস ওই সময়ে জলবেষ্টিত ছিল। এর ফলে, এই দ্বীপপুঞ্জে মানবের উপস্থিতি একটি অভিন্ন মহাসাগরীয় ঘটনার উপর নির্ভর করে। নেয়ান্ডারথালরা ছিলেন প্রথম জাহাজসমূহের নেভিগেটর এবং এর কারণ খুব সম্ভবত হল, তারা ১১০ থেকে ৩৫ হাজার বছর আগে তাদের ভ্রমণ শুরু করেছিলেন। “voyaging nurseries” এবং “autocatalysis” ধারণাগুলি অনুসারে, উপকূলীয় অভ্যস্ততা সমুদ্রীয় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সম্পর্কিত একটি গবেষণা দল জার্নাল অফ আর্কিয়োলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত রিপোর্টে বলেছে।
গ্রিক মূল ভূমি থেকে পাঁচ থেকে বারো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত – জাকিন্থোস, লেফকাডা এবং কেফালোনিয়া নামক দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মুস্টেরিয়ান সরঞ্জামসমূহ আবিষ্কার করেছে। মুস্টেরিয়ান সরঞ্জামসমূহ নেএন্ডারথল মানবজাতির সাথে সম্পর্কিত, এটি সাধারণত ৩,০০,০০০ থেকে ২৭,০০০ বছর পূর্বে উন্নয়ন করা হয়েছে। মুস্টেরিয়ান সরঞ্জামের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত হওয়া হাত ছুরি, কাটাচাকা, স্ক্রেপার, ব্যাক ক্নাইভ, ডেন্টিকুলেট এবং পয়েন্টস সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস ছিল।
গ্রিসের এই দ্বীপগুলোতে নেয়ান্ডারথালদের সরঞ্জামগুলো কীভাবে পাওয়া গেল? শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পল পেটিটের অনুসারে, বহু আগে মৃত আমাদের পূর্বপুরুষরা অতদূরে সাঁতারে পার করেছিলেন যদিও এটি সম্ভব, তবে এটি ব্যাখ্যা করে না কেন ওই দ্বীপগুলোতে অনুরূপ সরঞ্জামগুলো পাওয়া গিয়েছিল। এটা অত্যন্ত অসম্ভব মনে হচ্ছে, কারণ যেসব সাঁতারু এত দূর সাঁতার করতে এসেছিল, তারা এটা আগে থেকে জানত না যে খুজে পাওয়ার জন্য ক্রীট সেখানে রয়েছে। (এখানে পৌঁছাতে ৪০ কিলোমিটার সাঁতার করা প্রয়োজন হয়েছিল)।
গবেষণার প্রধান লেখক জর্জ ফেরেন্টিনোস এবং তাঁর দল এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বলে যে, এই প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্রপাতিগুলো এটাই প্রমাণ করে যে নিয়ান্ডারথালরা আধুনিক মানুষের আগে জাহাজ নির্মাণ এবং চালনা করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল।
বিজ্ঞানীদের মতে, আবিষ্কৃত এই প্রাগৈতিহাসিক পাথরগুলো প্রায় ১০০,০০০ বছর আগের। এটি নির্দেশ করে যে, আধুনিক মানুষ নৌকা চালানোর কাজ শুরু করার অন্তত ৫০,০০০ বছর আগে নিয়ান্ডারথালরা ভূমধ্যসাগর ঘুরে বেরিয়েছে। কিছু গবেষক দাবি করেন, মানুষ এক মিলিয়ন বছর ধরে নৌকায় ভ্রমণ করে আসছেন! এই অনুমানটি ফ্লোরেস নামের ইন্দোনেশীর একটি দ্বীপে আবিষ্কৃত স্টোন টুলসমূহের মাধ্যমে সমর্থিত।
দুর্ভাগ্যবশত, প্রত্নতাত্ত্বিকরা অবশ্যই আর বেশি প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেনি কারণ নিয়ান্ডারথালদের তৈরিকৃত যেকোনো নৌকাই ছিল কাঠের তৈরি। চবহু বছর আগেই যার অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৭১৬
আপনার মতামত জানানঃ