বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো প্রাণীর চেহারা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রাশিয়ার এক পাহাড়ের ঢালে খুবই অদ্ভুত উপবৃত্তাকার যে জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটাই যে বিশ্বের প্রথম প্রাণী, এখন তাতে সন্দেহের অবকাশ সামান্যই।
ডিকিনসনিয়া নামের এই প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর থেকেই কয়েক দশক ধরে প্যালিঅন্টোলজিস্ট বা জীবাশ্মবিজ্ঞানীদের মধ্যে জোর বিতর্ক চলছে। প্রায় ৫৬ কোটি বছর আগে এই প্রাণী দাপটের সঙ্গে পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করত। জীববিজ্ঞানের ভাষায় সেটি ছিল এডিকারান যুগ।
মনে করা হয়, এই যুগেই পৃথিবীতে প্রথম বহুকোষী বৃহদাকৃতির প্রাণীর আগমন ঘটে। কিন্তু সেগুলো দেখতে এখনকার প্রাণীদের চেয়ে এতই ভিন্ন ধরনের ছিল যে সেগুলো সত্যিকার পরিচয় এত দিন এক রহস্য হয়ে ছিল।
এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ডিকিনসনিয়া নামের এই জীব কোনো বহুকোষী প্রাণী নয়। মিটারখানেক দৈর্ঘ্যের হলেও এটি আসলে একটি এককোষী এমিবা বা ছত্রাক।
তবে এত দিনে বিবাদভঞ্জন হয়েছে। গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন, এটি আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীই। সে হিসেবে এগুলো বিশ্বের প্রথম প্রাণীগুলোর একটি।
প্রাণীটির জীবাশ্ম এত ভালোভাবে সংরক্ষিত যে বিজ্ঞানীরা এটির ভেতরে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি পেয়েছেন। এটি এমন চর্বিজাতীয় উপাদান, যা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর সাক্ষ্য বহন করে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোকেন ব্রকস বলেন, ‘আমরা যে ধরনের চর্বি উপাদানের উপস্থিতি পেয়েছি, তা প্রমাণ করে পৃথিবীতে ৫৫ কোটি ৮০ লাখ বছর আগেও ও রকম বড় আকারের প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। আগে আমরা যা ভাবতাম, এটা তার চেয়েও কয়েক কোটি বছর আগেকার সময়।’
এত দিন পর্যন্ত মনে করে আসা হয়েছে, বড় আকারের প্রাণীরা পৃথিবী শাসন করতে শুরু করে ক্যামব্রিয়ান যুগে, আজ থেকে ৫৪ কোটি বছর আগে।
মূলত পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ও এ সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যদিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো প্রাণী কি ও তারা দেখতে কেমন তা জানার চেষ্টা করছেন তারা। এক্ষেত্রে অনেকটা সফলও হয়েছেন গবেষকরা।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এই প্রাণীরা কী খেয়ে জীবনধারণ করত সে সম্পর্কে সম্মক ধারণা পেয়েছেন বলে মনে করছেন একদল গবেষক।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরনো ওই জীবাশ্মের মধ্যে অ্যালগি ও ব্যাকটেরিয়ার মতো উপাদান মিলেছে যা সাধারণত সাগরতলে পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার সহ-লেখক অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোকেন ব্রকস বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় যে ফসিল বা জীবাশ্মটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা বিবর্তনের ধারায় এ যাবৎকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসিলগুলোর অন্যতম।
এটা আমাদের দেখা সবচেয়ে পুরনো প্রাণীর বড় ফসিলগুলোরও একটি।’
জোকেন ব্রকসের মতে, প্রাণীটির অন্ত্র ছিল। তার ভাষায়, ‘অন্ত্র থাকা খুবই আধুনিক ব্যাপার। স্পঞ্জ, কোরাল বা প্রবাল ও জেলিফিশের মতো প্রাণীর স্বাভাবিক অন্ত্র নেই।’
গবেষণার প্রধান লেখক ড. ইলিয়া ববরোভস্কির মতে, এডিয়াকারান যুগের জীবাশ্মটির অন্ত্রে যেসব জীব পাওয়া গেছে তা এডিয়াকারান থেকে প্রাণীর ক্যামব্রিয়ান যুগে উত্থান ও আধুনিক প্রাণীর উত্থানের প্রমাণ বহন করে।’
বিজ্ঞানীরা যে ফসিলটি নিয়ে গবেষণা করছেন সেটা আবিস্কৃত হয় রাশিয়ায় এক পাহাড়ের ঢালে। এ ধরনের আরও বেশি কিছু ফসিল গবেষক ড. ইলিয়া ববরোভস্কির সংগ্রহে রয়েছে। অদ্ভুত উপবৃত্তাকার এই জীবাশ্ম নাম দেয়া হয় ডিকিনসনিয়া।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ