আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় দেখা মিলেছে মৎস্যকন্যাদের। কোমর থেকে পা পর্যন্ত রঙিন আঁশের মতো আবরণ। লাল-নীল-গোলাপি চুলের রঙ। ঠিকরে বেরোচ্ছে রূপ। আর তা জুড়ে সাধারণ মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়।
মৎসকন্যাদের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক জল্পনা থাকলেও তাদের বাস্তব অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ কখনো পাওয়া যায়নি।
লোককথা বা পুরাণ থেকে শুরু করে সিনেমা, বিভিন্ন জায়গায় মৎস্যকন্যাদের বিবরণ ছড়িয়ে রয়েছে। কল্পিত এই প্রাণীর শরীরের উপরিভাগ নারীর মতো হলেও শরীরের নিচের অংশ মাছের মতো। কিন্তু ভার্জিনিয়ায় যে মৎস্যকন্যাদের দেখা মিলল, তাদের রূপসী বই অন্য কিছু বলা যাবে না।
ভার্জিনিয়ার এই মৎস্যকন্যারা কিন্তু আদপেও সত্যিকারের নন। পুরোটাই সাজানো। পুরোটাই বিশেষ এক অনুষ্ঠান (বলা ভালো, উৎসব)-কে কেন্দ্র করে আমোদের অংশ। ভার্জিনিয়ায় হওয়া এই অনুষ্ঠানের নাম ‘মারম্যাজিক কনভেনশন’।
৩ থেকে ৫ মার্চ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে মৎস্যকন্যার রূপে সেজেছিলেন শতাধিক নারী।
পূর্ব আমেরিকার ভার্জিনিয়ার মানসাসের একটি কৃত্রিম জলাশয়ে ‘মারম্যাজিক কনভেনশন’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। শুধু ‘মারম্যাজিক কনভেনশন’ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মৎস্যকন্যাদের থিম হিসাবে রেখে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে তাদের মধ্যে মানসাসের এই অনুষ্ঠানই সবচেয়ে বড়।
‘মারম্যাজিক কনভেনশন’-এর মৎস্যকন্যাদের মধ্যে ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি হেলেনা ম্যাকলিওড। চারকোট-মারি-টুথ নামের একটি একটি স্নায়ুরোগের কারণে তিনি ভালোভাবে সাঁতার কাটতে অক্ষম। মাঝেমধ্যে চলাফেরা করতে হয় হুইলচেয়ারের সাহায্যে। তবুও মৎস্যকন্যা হয়ে বাঁচতে তিন দিন এই অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
স্বামী ড্যারেনের সাহায্যে হেলেনা বিস্তৃত ছিদ্রযুক্ত সিলিকন পাখনা লাগিয়ে পানিতে নেমেছিলেন। হেলেনার কথায়, ‘আমি ভাবতেই পারছি না যে, আমি এক দিন পানিতে নামব। তা-ও আবার মৎস্যকন্যা হয়ে। খুব আনন্দ পেয়েছি। নিজেকে খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল।’
হেলেনা জানান, এর আগে ‘মারম্যাজিক কনভেনশন’-এ ‘প্রতিবন্ধী মৎস্যকন্যা’দের সংখ্যা কমছিল। কিন্তু চলতি বছরে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি প্রতিবন্ধী নারীরাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
মানসাসের এই অনুষ্ঠানে তিন দিন ধরে ঢালাও খানাপিনারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আয়োজন ছিল বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলোরও। তবে সবার চোখ কিন্তু মূলত ছিল জলকেলিরত মৎস্যকন্যাদের দিকেই।
এই অনুষ্ঠানে আবার পানি সংক্রান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু কর্মশালারও আয়োজন ছিল। মেরলট নামের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী জানান, মৎস্যজীবীদের এই অনুষ্ঠানের ভাবনা খুবই সৃজনশীল।
মেরলট বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে বয়স, জাতি, শারীরিক গঠন নির্বিশেষে যে কেউ মৎস্যকন্যা হিসাবে যোগ দিতে পারেন। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।’
আমেরিকার ফ্লোরিডার ছোট্ট শহর উইকি ওয়াচির ওয়াটার পার্কেও আগে এ রকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। উইকি ওয়াচিতে বসন্তকালে হওয়া মৎস্যকন্যাদের অনুষ্ঠান দেখতে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ওয়াটার পার্কে ছিল বিশালাকার অ্যাকোয়ারিয়াম। সেখানেই চলত মৎস্যকন্যাদের অনুষ্ঠান। রোজ টিকিট কেটে সেই অনুষ্ঠান দেখতেন পর্যটকরা।
ঐ ওয়াটার পার্কে প্রথম অনুষ্ঠান হয় ১৯৪৭-এর ১৩ অক্টোবর। তারপর থেকেই সেখানে চলে আসছে ওই অনুষ্ঠান। বাচ্চা থেকে বুড়ো, মৎস্যকন্যাদের শো দেখতে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত।
মৎস্যকন্যা সাজতে মডেলরা আসতেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। মৎস্যকন্যার পোশাক পরে পানিতে নেচে বেড়াতেন তারা। পানির মধ্যে মৎস্যকন্যাদের নাচে আকৃষ্ট হতেন দর্শকরা। তবে ২০২০ সালে সেই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
এসডব্লিউএসএস/২১৩০
আপনার মতামত জানানঃ