ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষে ছিল চীন। এবার চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষ উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গেলো বছর চীন থেকে অন্তত ৫ কোটি কেজি বেশি কাপড় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শ্রমিক সংকট ও খরচ বাড়ায় চীন পোশাক খাত থেকে সরে আসছে, এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এটি ধরে রাখতে জ্বালানি সংকট দূর করা, উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরি ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার দাবি কারখানা মালিকদের।
বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানিবাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
গেলো অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে এসব দেশ সারাবিশ্ব থেকে পোশাক কিনেছে ৩৪৭ কোটি কেজি। যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই বাংলাদেশের। যার পরিমাণ ১০২ কোটি ৭৬ লাখ কেজি। একই সময়ে চীন থেকে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৯৭ কোটি কেজি। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রায় ৫ কোটি কেজি বেশি পোশাক রপ্তানি করে, শীর্ষে উঠে আসে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পোশাকের মূল্য ১ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার। আর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ। বিজিএমইএ বলছে, বাংলাদেশি ডেনিমের বাড়তি চাহিদা, শ্রমিক সংকট ও খরচ বাড়ায় চীন পোশাক তৈরি থেকে সরে আসা এবং আমেরিকার সাথে দেশটির অর্থনৈতিক লেনদেন বন্ধে এমন সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ডেনিমে আমরা এরি মধ্যে এক নম্বরে চলে এসেছি। চীনের থেকেও আমরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আছি। গত এক বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি চীনের থেকে বেশি ছিল। আগামীতে আমদের আশা আরও বিভিন্ন পণ্যে চীনকে ছাড়িয়ে যাব।
বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, একদিকে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ, আরেকদিকে আমাদের দেশে স্থিতিশীল একটা পরিবেশ ছিল। ইউরোপে আমাদের ডেনিম এবং নিট আইটেম বেশি যায়। এই কারণে চীন আমাদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৫ বছর আগে ইউরোপের পোশাক বাজারে প্রায় ৩২ শতাংশ দখলে ছিলো চীনের। যা এবছর নেমে এসেছে ২২ শতাংশে। আর বাংলাদেশের দখল ছিলো ১৮ শতাংশ যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন দামী পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া, ডিজাইন আর মানেও বেশ পরিবর্তন এনেছে। এসব কারণে ইউরোপের পোশাক বাজারে এগিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এশিয়ান এ্যাপারেলস লিমিটেডের ম্যানেজার খন্দকার বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। আমরা ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি। নতুন নতুন স্টাইল, ডিজাইন তৈরি করে আমাদের বাজার আগের থেকে ভালো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ ৫ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয়ে আরেকটি রেকর্ড। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানির এ তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।
ইপিবি’র প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিটওয়্যারের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০১১ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে আয় ৮২১ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২.৫৫ শতাংশ এবং ১৯.৬১ শতাংশ।
একক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ৩২৩ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের একই মাসে ৩৫.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৭ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ