বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সিনেটর জ্যানেট রাইস।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে ৮ ফেব্রুয়ারি ‘বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে এক বক্তৃতার সময় তিনি এই আহ্বান জানান।
রাইস অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনস দলের নেতা। একই সঙ্গে তাকে দেশটির একজন প্রভাবশালী সিনেটরও বলা হয়।
দলটির ইউটিউবে চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাইস বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ম্যাগনেটস্কি আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন।
বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সিনেটে ১০ মিনিট বক্তৃতা করেন রাইস। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চার মিনিটের মাথায় তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
এর আগে পরে বক্তব্যে তিনি মিয়ানমার, ইরান, চীন, আজারবাইজানসহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সিনেটর রাইস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই।
দুঃখজনকভাবে আমরা দেশটির সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত থাকার বিষয়টি লক্ষ করছি। আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের সমর্থনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
তাদের অনেকেই নিউ সাউথ ওয়েলসে (অস্ট্রেলিয়ার একটি রাজ্য) থাকেন। সম্প্রতি আমি তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। তাদের সাহস আর ধৈর্য আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছি।’
তবে তাদের (ভিন্নমতাবলম্বী) স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল দাবি করে রাইস বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আছে। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিক ও সমালোচকদের গ্রেপ্তার করছে।
দেশের নাগরিক সমাজের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ সমকামীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ব্যর্থ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, নারীরা ব্যাপক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন।
রাইস বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি ওই নৃশংসতাকে চিহ্নিত করা এবং দেশটিতে মানবাধিকার সুরক্ষায় যা যা করা প্রয়োজন সেটা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিনব ও গুরুতর সব ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে সিনেটে দেওয়া বক্তৃতার শুরুতে সিনেটর জ্যানেট রাইস বলেন, অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনস দল বিশ্বাস করে যে, সর্বজনীন মানবাধিকার একটি মৌলিক বিষয়। বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের অবশ্যই মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।
দেশটির ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল দাবি করে সিনেটর জ্যানেট পার্লামেন্টে বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের অভিযোগ রয়েছে। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিক এবং সমালোচকদের গ্রেপ্তার করছে। দেশের সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সমকামীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং নারীরা ব্যাপক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, সিনেটর জ্যানেট রাইস আট বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে রয়েছেন। জ্যেষ্ঠ এ সিনেটর ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বময় ন্যায়বিচার তথা মানবিক পৃথিবী গড়ার আন্দোলনে সক্রিয়। তিনি গ্রিনস পার্টির নেতা এবং তার অঞ্চলে পার্টি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। পার্লামেন্ট মেম্বার হওয়ার আগে তিনি মেলবোর্নের পশ্চিমের মেরিবির্নং শহরের কাউন্সিলর এবং মেয়র হিসেবে কাজ করেছেন।
জ্যানেট তার দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন বহু বছর। বৈশ্বিক শান্তি, গণতন্ত্র, পরিবেশগত স্থায়িত্ব, সাম্য এবং ন্যায়বিচারের একনিষ্ঠ সমর্থক জ্যানেট রাইস আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রচারে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এডভোকেসি করেন। মূলত এটিই তার রাজনীতির ভিত্তি।
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকের সময় চীনে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশটির প্রতি আগ্রহ বাড়ে জ্যানেটের। তিনি তিব্বতের ন্যায্যতার কট্টর সমর্থক। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিব্বতের ওপর অনুষ্ঠিত বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলনে সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে তিব্বতি, উইঘুর এবং অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর কর্তৃত্ববাদীদের চাপ তথা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত তুলে ধরেন তিনি। বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটুক তিনি সোচ্চার হন, নিন্দা করেন।
চরম অবস্থায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের মাধ্যমে ম্যাগনিটস্কি আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাও ঘটিয়েছেন অনেক বার।
এসডব্লিউএসএস/০৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ