ভারত সরকার একজন সিনিয়র আইনজীবীকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে অস্বীকার করেছে। কারণ তিনি সমকামী এবং তার একজন বিদেশী পার্টনার রয়েছে। শুক্রবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ খবর জানিয়েছে। ভারত সরকার অনেক আগে থেকেই দেশটিতে সমকামীদের অধিকারের ব্যাপক বিরোধিতা করেছে।
যদিও সমকামিতার প্রতি মনোভাব শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে কিছুটা বদলেছে, কিন্তু অনেক সমকামী ভারতীয় এখনও তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা কর্মক্ষেত্রে সম্মানহানির শিকার হন।
গত নভেম্বরে, প্রধান বিচারপতি সহ সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে সৌরভ কিরপালকে দিল্লিতে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল, যিনি নিজেকে প্রকাশ্যে সমকামী বলে স্বীকার করেছেন।
প্যানেল আদালতের ওয়েবসাইটে বলেছে, ”সরকার সৌরভ কিরপালের প্রার্থিতা ফেরত পাঠিয়েছে, এই বলে যে দেশের বহিরাগত গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন মন্ত্রণালয় তার যৌন অভিমুখিতা এবং একজন সুইস নাগরিকের সাথে “ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের” কারণে আপত্তি জানিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন নিম্ন আদালতে শুনানি মামলায় সমকামী সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করেছে। যদিও প্যানেল জানিয়েছে কিরপালকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনীত করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয় সর্বোচ্চ আদালত কিরপালের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা স্বীকারোক্তির প্রশংসা করেছে। ভারতের আইনমন্ত্রী কিরপালের মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানান, বিষয়টি সমকামীদের অধিকারের প্রতি প্রবল সম্পৃক্ততা ব্যক্ত করে এবং পক্ষপাত ও কুসংস্কারের সম্ভাবনা উদ্রেক করে।
সমকামিতা ভারতে অপরাধমূলক, সমকামী বিবাহ এখনও ভারতে আইনি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। সমকামী বিবাহের অনুমতি দেওয়ার আশায় বেশ কিছু আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এর মধ্যেই বিচারকদের নিয়োগ নিয়ে আদালত এবং মোদি সরকার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ল।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সমকামিতার বৈধতা দেত ভারত। সমকামিতা ভারতে আর অপরাধ নয় বলে ঐতিহাসিক রায় দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে ভারতে সমকামিতা বৈধতার দাবিতে ১৫৭ বছর আন্দোলনের অবসান হল।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী প্রকৃতি বিরুদ্ধ যেকোনও ধরনের যৌনতাকেই অপরাধ বলে গণ্য করা হত। যার ফলে এদেশে সমকামিতাও ছিল নিষিদ্ধ। ৩৭৭ ধারায় প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচারের জন্য ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণার সংস্থান ছিল। কিন্তু সেদিনের রায়ের ফলে ভারতে সমকামিতা আর কোনও অপরাধ রইল না। একযোগে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান শর্ত-ই হল ব্যক্তিগত পছন্দের স্বীকৃতি। পুরোনো সমস্ত ধ্যানধারণাকে দূরে সরিয়ে নাগরিকদের সম অধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতিরা।
তবে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, ৩৭৭ ধারায় সমকামিতার অধিকার খর্ব করা অযৌক্তিক এবং অপ্রাসঙ্গিক।
১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয় এ আইন। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারা সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছে।
২০০১ সালে দিল্লি হাইকোর্টে প্রথমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে সমকামিতার পক্ষে সওয়াল করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নাজ ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট, সমকামিতার পক্ষেই রায় দেয়। দুজন প্রাপ্তবয়স্কের তাদের স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্কের মধ্যে নাক গলানো ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে লঙ্ঘন করা বলেই রায় দিয়েছিল আদালত। কিন্তু ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে সেই রায় খারিজ হয়ে যায়। ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা আছে বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফের শুরু হয় আইনি লড়াই। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালে অবশেষে স্বস্তির হাসি হেসেছিল সমকামিতার স্বীকৃতির পক্ষে সওয়ালকারীরা।
তবে কিছু ধর্মীয় সংগঠন এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানায়। ২০১৩ সালে সুপ্রিমকোর্ট সমকামিতার অধিকার নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দেন।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ