শুধু রাজনীতির ময়দান নয় আদালতের চার দেওয়ালও নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামীলীগ। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি অভাবনীয় উত্থানে গত প্রায় দেড় দশক ধরে শাসনতন্ত্রের মুখে জিন পরিয়ে রাখা এই দলটি একপ্রকার নিজেদের পিঠ বাঁচাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের ষড়যন্ত্র করে।
কোন প্রকার অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হয় মামলা। বারবার নামঞ্জুর করা হয় জামিন। এরপর যখন জামিন পেলেন তখনো মুক্তি পেলেন না ফখরুল ও মির্জা আব্বাস।
সূত্র মতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার আপিল বিভাগে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে। একই সঙ্গে আপিল বিভাগে শুনানির আগে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা মুক্তি পাবেন না বলেও আদেশ দেন চেম্বার আদালত।
এর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে গত ৭ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় কারাবন্দী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার রুলসহ জামিন মঞ্জুর করেন।
তবে আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি ) চেম্বার জজ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বুধবার সেই জামিন আদেশ স্থগিত করেন। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আগামী রোববার (৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ফখরুল ও আব্বাসের পক্ষে ছিলেন জয়নুল আবেদীনসহ বিএনপির আইনজীবীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ৬ মাসের অন্তঃবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের বাসায় পৃথক অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।
পরদিন দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলায় উসকানি, পরিকল্পনা ও নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তিনবার নাকচ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফখরুলের একজন প্রৌঢ় রাজনীতিক এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুর্নীতি বা ওই ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তিনি কখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এ রকম কিছুর প্রমাণও মেলেনি। এরপরও ফখরুলের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে একের পর এক মামলা হয়েছে। গত ১০ বছরে তার বিরুদ্ধে ৯২টি মামলা হয়েছে এবং ৩৫০ দিনের মতো জেল খেটেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘গায়েবি’ মামলা অর্থাৎ অস্তিত্বহীন ঘটনাতেও মামলা হয়েছে।
আর এজন্যই ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলা, তাকে গ্রেপ্তার এবং বারবার জামিন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টিকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই। যেকোনো অজুহাত বা সুযোগে সরকার যে তাকে কারাগারে আটকে রাখতে চায়, এটা স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়রাপারসন তারেক রহমান রাজনীতিতে পুরোপুরি ‘সক্রিয়’ নন। তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ এবং অন্যজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ রকম অবস্থায় মহাসচিব ফখরুলই মাঠের রাজনীতিতে কার্যকরভাবে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকার ও সরকারি দলের নীতিনির্ধারকেরা হয়তো মনে করছেন, ফখরুলকে কারাগারে আটকে রাখতে পারলে বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতায় পড়বে, একইভাবে সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনও গতি হারাবে। সরকারের এই প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।
এসডব্লিউএসএস/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ