দুপুরে ঘণ্টা দেড়েকের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটও। বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী একপর্যায়ে অবস্থান নেন দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে। বিকেলে দরজা ভেঙে কার্যালয়ে ঢোকে পুলিশ।
সংঘর্ষের পর এবার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। নেতা-কর্মীরা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রাখলেও পুলিশ সেটি ভেঙে ভেতরে ঢোকে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়।
কার্যালয়ের সামনে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সকাল থেকে যে বক্তব্য চলছিল, সেগুলোও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী শনিবার অনুমতি না থাকলেও নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণায় অটল বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ শুরু হয় দুপুরের পরপর। ঘণ্টা দেড়েকের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটও।
বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী একপর্যায়ে অবস্থান নেন দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে। তাদের উদ্দেশ করে দুই দফা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। আহতদের নিয়ে আসতে অ্যাম্বুলেন্সকেও বাধা দেয়ার অভিযোগ করছে বিএনপি।
বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ সদস্যরা কার্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ সে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ভেতরে অবস্থান করছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যার বিরুদ্ধে ১ ডিসেম্বর নাশকতার এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ২০১২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার মামলায় সেদিন আদালতে হাজিরা ছিল তার। কিন্তু বিএনপি নেতা হাজিরা না দেয়ার পর তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ আসে।
রিজভী ছাড়াও বিএনপি চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকেও আটক করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘রিজভীসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে গেছে।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে আসার পর আগামী ১০ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীতে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে এই সমাবেশের স্থল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি সমাবেশ করতে চায় নয়াপল্টনে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু তারা সেখানে যাবে না।
পুলিশ জানিয়েছে, সড়কে সমাবেশ করা যাবে না। এরপর বিএনপি আরামবাগে সমাবেশ করার কথা জানায় মৌখিকভাবে। তবে সে আবেদন মৌখিকভাবেই নাকচ করা হয়।
সমাবেশস্থলের কথা না জানিয়েই বিএনপি জনসভায় অংশ নেয়ার প্রচার চালাচ্ছিল। এর মধ্যে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থানও নিতে থাকেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দুপুরের আগে বলেন, তারা যেখানে অনুমতি চেয়েছেন, সমাবেশ সেখানেই হবে। কোনো গ্রহণযোগ্য বিকল্প প্রস্তাব থাকলে সেটি দিতে হবে পুলিশ বা সরকারকে।
পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, বিএনপির কাজ বিএনপি করবে- দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদের নেতার পক্ষ থেকে এই বক্তব্য আসার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান শুরু হলে বেলা সাড়ে চারটার দিকে মির্জা ফখরুল সেখানে আসেন। এ সময় কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মির্জা ফখরুলকে সেখানে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। তিনি কার্যালয়ের সামনে বসে পড়েন। পুলিশের এই অভিযানের এক পর্যায়ে রুহুল কবির রিজভীকে আটক করা হয়।
এদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনের সংঘর্ষে আহত আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে আনা হয়। তাদের মধ্যে মকবুল মারা গেছেন। অন্যদের মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল ও খোকন।
উল্লেখ্য, আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল সোয়া চারটার দিকে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে।
এরে আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হন। বিএনপির দাবি, তাদের বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯১১
আপনার মতামত জানানঃ