সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৯ নভেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে বিভাগজুড়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, সভা, মিছিল ও প্রস্তুতি সমাবেশ করছেন। গণসমাবেশের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গত নির্বাচনে সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে।
খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। আপনারা দেখেছেন, সিলেটের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রতিটিতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। বস্তুত এখন যেসব সাধারণ মানুষ সমাবেশে আসছেন, তারা বিএনপির দাবিগুলোকে নিজেদের দাবি বলেই মনে করছেন। যে কারণে মানুষ এত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সরকারের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে পরিবহন ধর্মঘট সত্ত্বেও দু-তিন দিন আগে এসে মাঠে অবস্থান করছেন, সমাবেশ শেষ করে বাড়ি ফিরছেন।
অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের ধারাবাহিকতায় সিলেটেও আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। আমাদের বিশ্বাস, বিভাগীয় গণসমাবেশে চার লাখ মানুষের সমাগম হবে সিলেট শহরে। ওই দিন পুরো সিলেট শহর একটি জনসভাস্থলে পরিণত হবে।
তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করছেন, লিফলেট বিতরণসহ নানা সময়ে তারা পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, প্রতি রাতেই কিছু কিছু নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ যাচ্ছে, টহল দিচ্ছে। বাড়ির সামনে একসঙ্গে চার-পাঁচটা পুলিশের গাড়ি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের তিনজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিলাদ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল উল্লেখযোগ্য। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। প্রথমে তাঁদের ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁদের আওয়ামী লীগের দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে, সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও যদি পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হলে কী করবে বিএনপি, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কৌশল আগাম বলব না। সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট করে মানুষের বিতৃষ্ণা কুড়ানো ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আর কোনো লাভ হয়নি। কারণ, এই পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে পেরেছেন, সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আসলে এ দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ সরকারের ভার বহন করতে পারছে না। এত সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, নৈরাজ্য! সমগ্র দেশকে জিম্মি করে রেখেছে এই সরকার। মানুষ এদের থেকে পরিত্রাণ চায়। পরিত্রাণ চায় বলেই বিএনপির দাবিগুলোর সঙ্গে মানুষ একাত্ম হয়েছে। বিএনপির দাবি এখন সাধারণ মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষ বিএনপির আন্দোলনকে নিজেদের আন্দোলনে পরিণত করেছে। সব বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে মানুষ নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছে এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য।
মূলত জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট চলছে। সরকার বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ। ব্যাংকে ডলার সংকট। সরকার বলছে, ইউক্রন যুদ্ধ। মেনে নিলাম। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে যে সংকট চলছে, সেটা তো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঘটেনি। সরকার ঘটিয়েছে। কেউ ১৬ বছর আগে। কেউ ১৬ বছর পর। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশে নির্বাচনের উপর আস্থাহীন সাধারণ মানুষ।
এরশাদের আমলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ অন্যদের নিয়ে আন্দোলন করেছে। এখন বিএনপি ও অন্যান্য দল একই দাবিতে আন্দোলন করছে। এর শেষ কোথায়? যেমন জনগণের নেই ভোটাধিকার, তেমন রাজনৈতিক দলগুলোর থাকে না রাজনৈতিক অধিকার।
যেই মুহূর্তে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি, সরকার অনুমতিও দেয়। স্বাভাবিকভাবে মানুষ আশা করেছিল, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশটি হয়ে যাবে। সমাবেশের আগে ও পরে সেখানকার জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে বসলেন। সংশ্লিষ্টরা বললেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে দুদিন পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডাকলে সরকারের বা আওয়ামী লীগের কী করার আছে। সত্যিই কি তাদের কিছু করণীয় নেই? মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
উল্টো এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, বিএনপির গণসমাবেশের আগে যে ধর্মঘট করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং সাধারণ শ্রমিক-মালিকদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। পুরোপুরি সরকারের নির্দেশে অতি উৎসাহী পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে পরিবহন ধর্মঘট করেছে।
যেকোনো কমর্সূচিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে কমর্সূচি আহ্বানকারী রাজনৈতিক দল যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার চেয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয় বেশি। এতে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন কিছুটা হলেও কমে।
সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে ও জনদুর্ভোগ এড়াতে সমাবেশের আগে গণপরিবহন চালু রাখা যেতে পারে। আগামীকাল শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে একটি গোয়ন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাটির মতে, গণসমাবেশের সময় পরিবহন বন্ধের কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়েছে, যাতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে কয়েকটি স্থানে শুরু থেকেই বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পযর্বেক্ষণে বলা হয়েছে, বিএনপি গণসমাবেশ করে জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পুনরায় শক্তি ফিরে পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সম্প্রতি গণসমাবেশে আশানুরূপ জনসমাগম হওয়ায় বিএনপি মনে করছে, তাদের জনসমর্থন আগের চেয়ে বাড়ছে এবং সাধারণ জনগণ তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
গণপরিবহন বন্ধসহ বিভিন্নভাবে বাধার কারণে বিএনপির বিগত পাঁচটি বিভাগীয় গণসমাবেশে দু-এক দিন আগেই নেতা–কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
এটা উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীতে ঢাকা মহানগরীতেও এ ধরনের বড় কোনো সমাবেশের আয়োজন করলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা দু-এক দিন আগে থেকে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ঢাকা মহানগরীতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ জনদুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩৭
আপনার মতামত জানানঃ