ব্রিটিশ সাবমেরিনে নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৫০ সেন্টের (৫০টাকা) বিনিময়ে নারী কর্মীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগসহ নারীদের যৌন হয়রানির বেশ কয়েকটি অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন দেশটির রয়্যাল নেভির প্রধান এডিএম স্যার বেন কে। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে সাবমেরিনে কাজ করা সাবেক নারীরা বলেছেন, কর্মরত অবস্থায় প্রায় সব কর্মকর্তাদের দ্বারাই তারা যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।
এক নারী কর্মী ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডেইলি মেইলকে জানান, ঘুমানোর সময় তাকে যৌন নিপীড়ন করেন উচ্চ পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন, ঐ অফিসার তার কিডনিতে মুষ্টিবদ্ধ হাতে আঘাত করেন।
তিনি আরো বলেন, অন্য একজন কর্মকর্তা তার শয়নকক্ষে মডেলদের নগ্ন ছবি রাখেন। তিনি ৫০ সেন্টের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন।
সাবমেরিনে কাজ করা একাধিক নারী বৃটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলকে জানান, দায়িত্ব পালনের সময় ‘দুর্ব্যবহারের’ সম্মুখীন হন তারা। অন্য বেশ কয়েকজন নারী জানান, প্রায়ই যৌন কাজ করতে বলা হতো তাদের। প্রায়ই তাদের ক্লিপবোর্ড ও কলম দিয়ে আঘাত করা হতো।
অভিযোগ আসার পর স্যার বেন কে বলেন, এসব ‘ঘৃণ্য’ অভিযোগ নিয়ে গভীরভাবে বিরক্ত। রয়্যাল নেভিতে এ ধরণের আচরণের কোনো স্থান নেই। যে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে নারী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাবমেরিনে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর সাবমেরিন সার্ভিসে মাত্র এক শতাংশ নারী কর্মী কাজ করছেন।
একজন কর্মকর্তা তার শয়নকক্ষে মডেলদের নগ্ন ছবি রাখেন। তিনি ৫০ সেন্টের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা সভ্য জগৎ ব্যবস্থার প্রতি কঠোর কশাঘাতস্বরূপ। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নারীকে পদে পদে হেয় বা অবমাননা করা, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা, নারীর অর্জন বেহাত করা, জোর খাটানো, গৃহস্থালিতে সম্পৃক্ত নারীর কাজের অবমূল্যায়ন, অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়া, যৌন ও অন্যান্য নির্যাতন-নিপীড়নের পাশাপাশি নারী তথা মানব সভ্যতায় সহিংসতার সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়ংকর রূপ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে ধর্ষণ।
এদিকে ব্রিটেনের অন্তত ৫৬ এমপির বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। পার্লামেন্টের অভিযোগ তদন্তকারী আইসিজিএস-এর কাছে এসব অভিযোগ রিপোর্ট করা হয়েছে। সানডে টাইমসের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ওই ৫৬ এমপির বিরুদ্ধে প্রায় ৭০টি যৌন অসদাচরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে গুরুতর অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে কনজার্ভেটিভ দলের এমপি ডেভিড ওয়ারবারটনও নারীদের শারীরিকভাবে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
এছাড়া গত বছর ধর্ষণের অভিযোগে অজ্ঞাত এক কনজার্ভেটিভ এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দেশটিতে।
সাবেক কনজার্ভেটিভ এমপি চার্লি এলফিকের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ‘মিটু আন্দোলনের’ প্রেক্ষিতে বৃটিশ এমপিদের এ ধরণের ব্যবহার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যে নারীদের প্রতি যে সহিংসতা মহামারি আকার ধারণ করেছে তা বন্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। জানা গেছে গত বছর যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ১০৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। যার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই পুরুষরা জড়িত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি উন্নত ও মানবাধিকারসম্পন্ন নিরাপদ পৃথিবী গঠনের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধগুলোর প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা অত্যন্ত জরুরি। এ কথাও সত্য যে, সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার পরও অন্য যে কোনো অন্যায় বা অপরাধের মতো আমরা হয়তো যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ পুরোপুরি প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে পারব না; তবে সচেতনতা, সতর্কতা, সামাজিক ও আইনি প্রতিকার এ সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ