অপহরণ করে নির্যাতনের পর এক সমকামী আফগান মেডিকেল শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে তালিবান। গতকাল মঙ্গলবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত ও-ই শিক্ষার্থীর নাম হামেদ সাবৌরি। হামেদ সাবৌরির পরিবার ও তার পার্টনার বলেন, কাবুলে গত আগস্টে এক চেকপয়েন্টে হামেদকে আটক করে তালিবান। এরপর তিনদিন ধরে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। শেষমেশ গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার ভিডিও তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে। হামেদের পরিবার ইতোমধ্যে আফগানিস্তান ছেড়েছে।
হামেদের পার্টনার বাহার বলেন, তালিবান হামেদকে হত্যার পর এর ভিডিও তার পরিবার ও আমাকে পাঠায়। হামেদের পরিবার আফগানিস্তান ছেড়েছে এবং আমি লুকিয়ে আছি। আমরা অন্য যুগলের মতই প্রেমে আবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু তালিবান আমাদের ক্রিমিনাল হিসেবে দেখত। তারা আমার ভালোবাসার মানুষকে হত্যা করেছে। আমি জানি না তাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো।
তিনি আরও বলেন, আমাকে তালিবান হুমকি দিচ্ছে এবং আমি এখন পালিয়ে আছি। এখানে সমকামী সম্প্রদায়ের অনেককে অপহরণ ও তাদের ওপর নির্যাতন করছে তালিবান।
নিজের পরিবার-পরিজন হোক বা বৃহত্তর সামাজিক পরিসর— আফগানিস্তানে সমকামীদের জায়গা বরাবরই সঙ্কীর্ণ। তা সত্ত্বেও দিনবদলের আশা ছিল। তবে সে আশায় পুরোপুরি পানি ঢেলে দিয়েছে তালিবানি শাসন।
তারা আমার ভালোবাসার মানুষকে হত্যা করেছে। আমি জানি না তাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো।
আফগানিস্তানের সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী বা ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ধারীদের জীবনে গণধর্ষণ, মারধর বা প্রাণনাশের হুমকিই এখন নিত্য বাস্তব।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর এক সমীক্ষায় এমনই দাবি করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ ওই আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবানি শাসকদের মদতে সে দেশে রমরমা বেড়েছে সমকাম-বিদ্বেষীদের।
রূপান্তরকামীদের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। খর্ব হচ্ছে স্বেচ্ছায় লিঙ্গপরিচয় বেছে নেওয়া মানুষজনের অধিকার।
এমনকি গণধর্ষণ, গণপিটুনি কিংবা খুনের হুমকিও পাচ্ছেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত আফগানরা। তালিবানি শাসনে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের বেঁচে থাকা।
তালিবানি শাসনের আগে এই সম্প্রদায়ভুক্তদের জীবন মসৃণ ছিল, এমন নয়। বরং আফগানিস্তানে সমকামিতা নিষিদ্ধ এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে নিদান দিয়েছিলেন তালিবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।
এইচআরডব্লিউ-র রিপোর্টে দাবি, ক্ষমতা দখলের পর থেকে শরিয়ত আইনের দোহাই দিয়ে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার লুপ্ত করার পথেই এগিয়েছে তালিবান।
গত বছর সংবাদমাধ্যমে এক তালিব মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘‘সমকামীদের জন্য কেবলমাত্র দু’টি শাস্তিই যথেষ্ট। পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা, নয়তো এমন এক দেওয়ালের সামনে দাঁড় করানো যাতে তারা চাপা পড়ে মরবেন।’’
নারীদের প্রতি কঠোর নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছে তালিবান। এরই মধ্যে দেশটিতে নারী মন্ত্রণালয় বাতিল করে স্থাপন করা হয়েছে পাপপুণ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিবানের ক্ষমতা গ্রহণের কারণে দেশটিতে নারীরাই আছে শঙ্কার মধ্যে, সেখানে সমকামী জনগোষ্ঠীর অবস্থা আরও ভয়াবহ।
তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করে নেবার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন সে দেশের সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাদের ওপরে তালিবানি খড়্গ যেকোন মুহূর্তে নেমে আসতে পারে। নারীদের ওপর যেভাবে তালিবানি ফতোয়া নেমে এসেছে, খুব শীঘ্রই যে তারা তালিবানের শিকার হতে চলেছেন সেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সমকামীরা।
আফগানিস্তানে বসবাসরত সমকামী বা ট্রান্স জেন্ডারদের অনেকেই এরই মধ্যে দেশ ছাড়তে সফল হয়েছে। তবে যারা এখনও আটকে আছেন, তাদের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। তালিবানের ভয়ে তাদের মধ্যে অনেকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাড়ির বেসমেন্টে লুকিয়ে আছেন। কেউ বা যথেষ্ট খাবারের সরবরাহ ছাড়াই বন্দি হয়ে আছেন একটি গোপন কক্ষে, কেউ গা ঢাকা দিয়ে আছেন বন্ধুর সাহায্যে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৭
আপনার মতামত জানানঃ