রাশিয়ান আইন প্রণেতারা সোমবার সমকামী বিরোধী আইন কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে ক্রেমলিন ব্যয়বহুল দেশপ্রেমিক শিক্ষা প্রকল্পের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, যখন ইউক্রেনে সৈন্যরা লড়াই করছে তখন মস্কো রক্ষণশীলতার দিকে চালিত করার জন্য বাড়িতে বাড়িতে চাপ দিচ্ছে।
রাশিয়ান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, ডুমা, ২০১৩ সালের আইনের সংশোধনী নিয়ে একটি পরামর্শ অধিবেশন করেছে। যা কর্তৃপক্ষ “সমকামী প্রপাগান্ডা” বলে মনে করে৷
খসড়া বিলটি “পারিবারিক মূল্যবোধের অস্বীকৃতি” এবং “অপ্রথাগত যৌন প্রবণতার প্রচার” সব বয়সের জন্য নিষিদ্ধ করে এটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আইন প্রণেতারা যুক্তি দিয়েছেন, পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার তীব্র দ্বন্দ্ব এবং এর সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিবেশীদের সাথে যুদ্ধের মধ্যে আইনটি কঠোর করা দরকার।
সিনিয়র আইন প্রণেতা এবং ডুমার তথ্য কমিটির প্রধান আলেকজান্ডার খিনস্টাইন বলেছেন, ইউক্রেনের আক্রমণ প্রস্তাবিত আইনটিকে “নতুন প্রাসঙ্গিকতা” দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষ অপারেশন শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, মানুষের মন ও আত্মার মধ্যেও সঞ্চালিত হয়।
ব্যাংকার এবং রক্ষণশীল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কনস্ট্যান্টিন মালোফেয়েভ ডুমা শুনানিতে বলেছেন, আইন পাস করা রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টার অংশ।
তিনি বলেন, যুদ্ধ শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়। আমাদের বাচ্চাদের স্মার্টফোনে, কার্টুন এবং ছবিতেও।
তিনি বলেন, আমাদের শত্রুরা সত্যিকার অর্থে সমকামিতার প্রপাগান্ডাকে এর প্রভাবের মূল হিসাবে ধরে রেখেছে।
ডুমা স্পিকার ব্যাচেস্লাভ ভলোডিন বলেন, এ সংশোধনী এবারের শরতেই অনুমোদন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভলোডিন বলেন, আইনটি রাশিয়ানদের রক্ষা করবে।
তিনি বলেন, এটি অধিকার সীমিত করা নয়, তবে তাদের প্রপাগান্ডা থেকে রক্ষা করা।
একই দিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সরকারকে দেশপ্রেমমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতি বছর ৩.৯ বিলিয়ন রুবল বরাদ্দ করার নির্দেশ দেন।
ক্রেমলিন ওয়েবসাইট অনুসারে, এর মধ্যে “ডিজিটাল সামগ্রী এবং মাল্টিমিডিয়া পণ্যগুলোও শিশু ও যুবকদের দেশপ্রেমিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
পুতিনের অধীনে রাশিয়ান স্কুলগুলো ইতিহাসের একটি রাষ্ট্রপন্থী সংস্করণ শিখিয়েছে। যা রাশিয়ার সামরিক সাফল্যের উপর ফোকাস করার সময় স্ট্যালিনবাদী অপরাধগুলোকে ম্লান করে দেয়।
যেহেতু রাশিয়ান নেতা ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়েছেন, সরকার স্কুলে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে একটি নতুন বিষয় চালু করেছে, “যা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে কথোপকথন”।
এর আওতা আরও বাড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে প্রচারের বিষয়টিও এতে যোগ করা উচিত। পাশাপাশি, অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ‘এলজিবিটি প্রচারণা’ চালানোর ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ড বাড়ানো উচিত।
এদিকে চলতি মাসে এলজিবিটি প্রচারণা নিয়ে ‘আইন লঙ্ঘনে’র অভিযোগে টিকটককে জরিমানা করেছে রাশিয়া।
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, টিকটকের বিরুদ্ধে এই মামলার কারণ প্ল্যাটফর্মে ‘অপ্রথাগত মূল্যবোধ, এলজিবিটি ও নারীবাদ’ প্রচারণার পাশাপাশি প্রথাগত যৌন মূল্যবোধের ‘বিকৃত উপস্থাপনা’।
বিদ্যমান ‘সমকামী প্রচারণা’ আইনকে আরও বিস্তৃত করার কথা বিবেচনা করছে রাশিয়া। ২০১৩ সালে পাশ হওয়া এই আইনে শিশুর সঙ্গে সমকামী যৌন সম্পর্ক প্রচারকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা আছে।
এখন দেশটির আইন প্রণেতারা বলছেন, এর আওতা আরও বাড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে প্রচারের বিষয়টিও এতে যোগ করা উচিত। পাশাপাশি, অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ‘এলজিবিটি প্রচারণা’ চালানোর ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ড বাড়ানো উচিত।
রাশিয়ার সরকার বলছে, পশ্চিমাদের প্রচারিত এবং রাশিয়ার সঙ্গে যায় না তথাকথিত এমন উদারনৈতিক মূল্যবোধের বিপরীতে নৈতিক অবস্থান রক্ষা করছে তারা।
তবে বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীর ভাষ্যমতে, এই আইন ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয় রাশিয়ার ‘এলজিবিটি’ সম্প্রদায়কে ভয় দেখাতে।
রাশিয়ায় সমকামিতা নিয়ে কড়া আইন রয়েছে। সে দেশে সমকামী মিছিল অবৈধ। এই আইন আরও কড়া করার বার্তা দিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। সেই আইনে বদল চান দেশটির সমকামীরা।
তারা বলেন, রাশিয়ায় সমকামিতা অবৈধ। আইনের চোখে সমকামী পুরুষ বা নারীরা অপরাধী। সবাইকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বাঁচতে দেওয়া উচিত। এ ভাবে আইন করে মানুষের জীবনকে আরও বেশি কঠিন করে তোলা হচ্ছে। এর বদল দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১২১
আপনার মতামত জানানঃ