প্রথম দফায় আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার ব্যবস্থা করে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসে এই টিকা সরবরাহ করা হবে।এ ৩ কোটি টিকার ডোজ দুবার করে প্রতি ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। ফলে প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে। আর জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। জুনের মধ্যে মোট ৯ কোটি ডোজ টিকা আসবে, যা ২০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ দুই দফায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাদের আগে তা প্রয়োগ করা হবে তার তালিকাও করা হয়েছে। প্রথমে এই তালিকা থেকে কারা কতজন পাবেন তাও নির্ধারণ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে৷
টিকা প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য উপজেলা কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদফতরের সহকারী প্রোগ্রামার, দু’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মনোনীত), স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে এমন দুটি এনজিও’র প্রতিনিধি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত)।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া কমিটি করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করবে। টিকা দেয়ার সময় কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং টিকা প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে উপজেলা কমিটি।
জানা গেছে, কোভিড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসাকর্মী থেকে শুরু করে আমলা, বিচারক, জনপ্রতিনিধি, ব্যাংক কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিনিধি, রোগপ্রতিরোধহীন জনগোষ্ঠীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ১৮ ভাগে ভাগ করে টিকাদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে টিকাগ্রহীতাদের একটি বড় অংশকেই যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালেও হবে টিকাদানের ব্যবস্থা।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা এবং কোথায় টিকা পাবেনঃ-
প্রথম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের (চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ ও প্যাথোলজি ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, প্রচলিত ও সম্পূরক চিকিৎসাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক)।
হিসাবমতে, এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়া সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়েও তারা টিকা নিতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) সব বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে (এনজিওসহ) সরাসরি কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় জড়িত সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।
হিসাব মতে, যার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।
কোথায় পাবেনঃ
তারা টিকা নেবেন উপরোক্ত পাঁচটি স্থান এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তৃতীয় ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) যেসব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নন-কোভিড সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী (স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও প্রশাসনিক কর্মী, লন্ড্রি ও কিচেন কর্মী, অফিস সহায়ক, চালক ও অন্যরা)।
হিসাব মতে যার সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার।
কোথায় পাবেন
০১) এদের টিকা নেয়ার স্থান বেসরকারি ও স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই।
চতুর্থ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) বীর মুক্তিযোদ্ধরা
হিসাব মতে যার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
পঞ্চম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি।
তাদের আনুমানিক সংখ্যা ৫,৪৬,৬১৯
কোথায় পাবেনঃ
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ ও পুলিশ হাসপাতালে।
ষষ্ঠ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) সামরিক, আধা সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনী (আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট।
তাদের আনুমানিক সংখ্যা ৩,৬০,৯১৩
কোথায় পাবেনঃ
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ ও পুলিশ হাসপাতালে।
সপ্তম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে অপরিহার্য তথা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
যাদের সংখ্যা ৫ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
সচিবালয় ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতালে।
অষ্টম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) সম্মুখসারির সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী
যার সংখ্যা ৫০ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নবম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) জনপ্রতিনিধি (সাংসদ, মেয়র, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, কাউন্সিলর ইত্যাদি)
যার সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও সংসদ সচিবালয় ক্লিনিকে।
দশম ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্মীরা
যার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সরকারি আউটডোর ডিসপেনসারি ও সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালে।
একাদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) ধর্মীয় প্রতিনিধিরা(ইমাম, মুয়াজ্জিন, চার্চ, মন্দির, বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের ধর্মীয় পেশাজীবী)
যার সংখ্যা ৫ লাখ ৮৬ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
দ্বাদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরা
যার সংখ্যা ৭৫ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
ত্রয়োদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) জরুরি বিদ্যুৎ পানি গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
যার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ
কোথায় পাবেনঃ
এবং সরকারি আউটডোর ডিসপেনসারি, সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালে।
চতুর্দশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) জল, স্থল ও বিমানবন্দরগুলোয় কর্মরত ব্যক্তিরা
যার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ
কোথায় পাবেনঃ
বন্দর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতালে।
পঞ্চদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে কাজ করতে হয়, এমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
যার সংখ্যা ৪ লাখ
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
ষষ্ঠদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) ব্যাংক কর্মী
যার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
সপ্তদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার)
যার সংখ্যা ৬ লাখ ২৫ হাজার
কোথায় পাবেনঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।
অষ্টদশ ধাপ
যারা পাবেনঃ
০১) বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগোষ্ঠী ক্যাম্পে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কোথায় পাবেনঃ
তারা ক্যাম্প ক্লিনিকেই টিকা নিতে পারবেন।
আপনার মতামত জানানঃ