অল্প পরিমাণে গাঁজা রাখার জন্য জাতীয় পর্যায়ে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সবাইকে ফেডারেল ক্ষমা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এ কথা জানা গেছে।
কর্মকর্তারা অনুমান করেছেন, প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমা ঘোষণায় অন্তত ৬, ৫০০ জন সরাসরি উপকৃত হবেন।
ফেডারেল ক্ষমা মানুষের জন্য কর্মসংস্থান, আবাসন এবং শিক্ষা পাওয়া সহজ করে তুলবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থী হিসাবে বাইডেন গাঁজার ব্যবহারকে অপরাধমুক্ত করার পাশাপাশি দোষী সাব্যস্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন, “গাঁজা রাখার জন্য কারাগারে পাঠানোর ফলে অনেক জীবন নষ্ট হয়েছে। এমন অপরাধের জন্য মানুষকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে যা অনেক রাজ্যে আর অপরাধ নয়।”
তিনি যোগ করেছেন, অ-শ্বেতাঙ্গদের পরিসংখ্যানগতভাবে গাঁজার জন্য জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
হোয়াইট হাউসের প্রার্থী হিসাবে বাইডেন ১৯৯৪ সালে মাদক নিয়ে একটি অপরাধ বিল লেখার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। এতে মাদক অপরাধের জন্য শাস্তি আরো কঠোর হয়ে উঠেছিল এবং দেশটির সংখ্যালঘুদের আরও কারারুদ্ধ হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছিল।
ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট অন্যান্য রাজ্যে গভর্নরদেরও গাঁজা সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষমা জারি করার আহ্বান জানান।
তিনি বিচার বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, কীভাবে ফেডারেল আইনের অধীনে গাঁজাকে বৈধ করা যায় তা পর্যালোচনা করার জন্য।
“আমরা গাঁজাকে হেরোইনের সমান স্তরের এবং ফেন্টানাইলের চেয়েও গুরুতর মাদক ভাবি। এর কোনো মানে হয় না।”
বিনোদনমূলক গাঁজা ইতিমধ্যে ১৯টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বৈধ। ৩৭টি রাজ্য এবং তিনটি মার্কিন অঞ্চলে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার বৈধ।
গাঁজা রাখার জন্য কারাগারে পাঠানোর ফলে অনেক জীবন নষ্ট হয়েছে। এমন অপরাধের জন্য মানুষকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে যা অনেক রাজ্যে আর অপরাধ নয়।
বিবিসি জানায়, গাঁজা ফেডারেল স্তরে এখনো অবৈধ রয়ে গেছে। এমনকি এমন রাজ্যগুলোতেও যেখানে এটি আইনত কেনা এবং ব্যবহার করা বৈধ। যার অর্থ সেখানকার লোকেরা এখনও নির্দিষ্ট পরিমাণ গাঁজা রাখার জন্য দোষী সাব্যস্ত হতে পারে।
বিবিসি আরও জানায়, নভেম্বরের কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন। নির্বাচনের এক মাস আগে বাইডেনের এই ক্ষমা তার মেয়াদের শেষ দুই বছরের জন্য ওয়াশিংটনে ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।
এদিকে বাইডেনের ক্ষমার খবরে গাঁজা কোম্পানির শেয়ার স্টক মার্কেটে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
গাঁজা অপরাধীদের ক্ষমা করা বাইডেনই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। এ তালিকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আছেন।
অফিসে তার শেষ দিনে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২ জন গাঁজা অপরাধীকে ক্ষমা করেছিলেন। যার মধ্যে কয়েকজন ১৯৯৪ সালে বাইডেনের অপরাধ বিল দ্বারা তৈরি থ্রি-স্ট্রাইক আইনের অধীনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল।
এর আগে গাঁজাকে কঠিন মাদকের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় গাঁজার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত।
কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশ আগেই চিকিৎসা খাতে ব্যবহারের জন্য গাঁজা উৎপাদনের বৈধতা দিয়েছে। সেই তালিকায় পাকিস্তানও আছে।
অনেক দেশেই গাঁজার বৈধতা পাওয়ার বিষয়টি শুরু হয়েছে গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের সাথে সাথে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় চিকিৎসা কাজে গাঁজার ব্যবহারের বিষয়ে মানুষের মনোভাব পরিবর্তন হতে থাকে মূলত, জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের শারীরিক যন্ত্রণার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ার পর। একই ধরণের ধারা লক্ষ্য করা গেছে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেও। যুক্তরাজ্যে ‘চিকিৎসা কাজে’ গাঁজার ব্যবহার বৈধতা পেলেও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ‘বিনোদনমূলক ব্যবহার’ অবৈধই থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, গাঁজার বিষয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মানুষ ও সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করে অনুমান করা যেতে পারে যে গাঁজার ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে অন্যান্য দেশও এর উৎপাদন ও ব্যবসার প্রসারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।
তারা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই চিকিৎসার কাজে গাঁজা ব্যবহৃত হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে আরো অনেক দেশে ব্যবহার শুরু হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকার গাঁজা চাষকে গুরুত্ব দেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ