৯ বছরের একটি মেয়ে ঢাকার রাস্তায় বাবার সঙ্গে ভিক্ষা করত। হঠাৎ তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাকে ভারত থেকে উদ্ধার করে দেশে নিয়ে আসে। জানা যায়, তার সঙ্গে একই বয়সের আরো একটি মেয়েকে দালাল চক্র ভারতে নিয়ে যায়। ঘটনাচক্রে দুটি মেয়েই ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
এমন বয়সের শিশুদের প্রতিনিয়তই দেশে ও দেশের বাইরে যৌনকাজে নিযুক্ত করার জন্য পাচার করা হচ্ছে। যারা শিশু পাচার বিষয় নিয়ে কাজ করেন তাদের মতে, যৌনকাজে নিযুক্ত করতে পাচার হওয়াদের মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু।
হাস্যকর বিষয় এমন বাস্তবতায় ‘সময়ের অঙ্গীকার, কন্যাশিশুর অধিকার’ প্রতিপাদ্যে আজ দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস।
আজ কন্যাশিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে পাচারের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা। তারা বলেন, ভারতের সঙ্গে উন্মুক্ত সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো, আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি, সাক্ষী সুরক্ষার ব্যবস্থা করা এবং এসংক্রান্ত মামলাগুলোর আপস-মীমাংসা রোধ করে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
গত আট মাসে ভারত থেকে ৪০-এরও অধিক পাচার করা নারী দেশে আসে। তাদের ৩০ শতাংশই শিশু বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সারভাইভার সাপোর্ট কো-অর্ডিনেটর দীপ্তি বল।
এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শিশু যৌনকর্মে যুক্ত হওয়ার পর ধরা পড়ে। ২০ শতাংশ পাচার হয়ে যৌনকর্মে যুক্ত হওয়ার আগেই ধরা পড়ে দেশে ফিরে আসে। তবে বছরে কত শিশু পাচার হয়, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ১৩টি শিশু পাচার হয়েছে। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কান্ট্রি ডিরেক্ট মো. তারিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, গত পাঁচ বছরে তারা পাচার করা ৫০০ নারীকে উদ্ধার ও পুনর্বাসন করেন, যাদের মধ্যে ২০০ জন বা ৪০ শতাংশ শিশু।
এই সব শিশু মোবাইল ফোনে প্রেম করে প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে, কাজের খোঁজে অথবা প্রতারণার বিয়ের মাধ্যমে পাচার হয়। প্রথমে তারা যৌনকাজে সম্মত না হলেও একসময় তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে দেশে এসে নিজেরাই শিশু-নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়। কেউ কেউ আবার দেশে ফিরে পরিবারের কাছে যেতে পারে না। তারা সরকারি ও বেসকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
ভারতে বাংলাদেশি যৌনকর্মীর চাহিদা বেশি থাকায় বাংলাদেশের দরিদ্র শিশুরা ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি বলেন, শুধু ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নয়, ভারত হয়ে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালেও এই শিশুদের পাচার করা হয়।
আমাদের আইন ও বিধি থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই। লোকবলের অভাবে সাক্ষী সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তবে অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি বলেন, সীমান্তের ২৮টি পয়েন্টে নারী-শিশু পাচার হয়। এই পয়েন্টগুলোকে কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। যে দেশেগুলোতে শিশু পাচার হয়, সরকারি পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার অ্যাডভোকেসি দেখা যায় না। রাষ্ট্রের পক্ষে শিশু পাচারের বিষয়টি উপেক্ষা না করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৪০
আপনার মতামত জানানঃ