সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বিদেশে এখন এটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে যে, দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।’
আজ বুধবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন সুজনের সম্পাদক।
দেশে বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার রায় বাতিলকে গোজামিলের রায় বলেও উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকার দরকার।
এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য জাতীয় সনদ নামে ২১ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি।
নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনা, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে এই ২১ দফায়।
সুজনের সম্পাদক আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এ কথা সত্য, তবে নৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে দেশে মহাসংকট তৈরি হয়েছে। কারো ক্ষমতাচ্যুতি তিনি দাবি করছেন না, তবে দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হোক, এটা তিনি চান। আর এ জন্যই তাঁর এই ২১ দফা প্রস্তাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তাই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, আগে গণতন্ত্র গুম হয়েছে, এখন এই রাষ্ট্র গুম হয়ে যাচ্ছে। সঠিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত দুই দশকে নির্বাচিত হয়েও সরকারগুলো ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচারী নানা কাঠামো তৈরি করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে।
গত দুই দশকে নির্বাচিত হয়েও সরকারগুলো ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচারী নানা কাঠামো তৈরি করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের ১৫ আনা মানুষ কালকেই সরকারের পদত্যাগ চায়। সংবিধান পরিবর্তন না করে সরকার পরিবর্তন হলে যিনি সরকারে আসবেন তিনিও শেখ হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদী হবেন। তাই নির্বাচনের আগে সংবিধানের সংস্কার করতে হবে। দেশের সবকিছু নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বে চলছে। ব্যতিক্রম ছাড়া উচ্চ আদালতের বেঞ্চগুলো সরকারের নোটের দিকে তাকিয়ে থাকে কী রায় দেবে।
তিনি বলেন, দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। দেশের কোনো মানুষ বিশ্বাস করে না যে, এই সরকারের অধীনে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবে। যেই সরকার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে হামলা করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে হামলা করে তাদের কাছে আর কী চাওয়ার আছে? এমন কর্তৃত্ববাদী সরকার অবাধ নির্বাচন করবে, এটা কোনো সাধারণ কথা না, এটা কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা। নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করা দরকার। দেশটা আজ মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। দুর্যোগকালীন ইভিএম প্রকল্প যৌক্তিক নয়।
মিরপুর থেকে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতি বলেন, তার স্বামী চার বছর আগে গুম হয়ে গেলেও র্যাব, পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে স্বামীকে আজও খুঁজে পাননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুমের শিকার পরিবারের মুখের ভাষা, বুকের ভাষা বোঝার আহ্বান জানান তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে জাতিসংঘকে তদন্ত করতে আসতে দেওয়ার অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ দিতে না পারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৬
আপনার মতামত জানানঃ