রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কৃষকেরা আলু ক্ষেতে ছত্রাকনাশক ‘এন্ট্রাকল ০০৯৯’ ছিটিয়েছিলেন। আর এতেই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেলো শত শত বিঘা আলুক্ষেত। এতে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা জানান, আলু জমিতে ছত্রাক ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তারা ‘এন্ট্রাকল ০০৯৯’ নামের একটি ওষুধ স্প্রে করেছিলেন। এরপরই তাদের আলু গাছ হলদে হয়ে মরে যেতে শুরু করে। অনেকের আলু জমি পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে।
কৃষক শামিম হোসেন বলেন, এ বছর তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। সব ধরনের ছত্রাক আর মোড়ক থেকে আলুগাছ রক্ষার জন্য শুক্রবার তিনি জমিতে ওষুধ স্প্রে করেন। শনিবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন সব আলুগাছ পুড়ে গেছে।
আরেক চাষি আসমত আলী বলেন, তিনিও এ বছর দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তারও একই অবস্থা। তারা বলেন, তাদের এলাকার ৫০ থেকে ৬০ জন আলু চাষির অন্তত এক হাজার বিঘা আলুর ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
এছাড়াও তানোর উপজেলার ধুরইল গ্রামের শাহিনের ১০ বিঘা, আকবরের ১০ বিঘা, তানোর পৌর এলাকার সেনদুগা গ্রামের মুনসুরের চার বিঘা, তানোর গ্রামের মোজাহারের সাত বিঘা জমিতে স্প্রে করায় নষ্ট হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
তানোরের চাষিরা উপজেলা সদরের ‘মেসার্স সৈয়ব আলী ট্রেডাসর্’ থেকে এই ওষুধ কিনেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়ব আলী ওষুধ কোম্পানিটির পরিবেশক। শনিবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন চাষি তার কাছে ছুটে আসেন। তারা সৈয়ব আলীকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।রাতে ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা ডিলারদের নিয়ে তানের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সভা করেছেন। সভায় কৃষি কর্মকর্তাসহ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক উপস্থিত ছিলেন।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, কৃষকরা বলছে শত বিঘা জমিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণটা আমাকে এখনও সঠিকভাবে জানাতে পারেনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম। বিষয়টি কৃষি বিভাগ দেখছেন। সেই সঙ্গে কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এসেছেন। তারাও মঙ্গলবার এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমাদেরকে জানাবেন। তবে প্রাথমিকভাবে কৃষক, ওসি, কৃষি কর্মকর্তা ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক হয়েছে। এখানে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্য আমাদের ওষুধ সারা বাংলাদেশেই ব্যবহার হচ্ছে। এখানে ওষুধের অনুপাতের হার কম-বেশি হওয়ার কারণে আলুর ক্ষেত নষ্ট হতে পারে। তবে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করায় ক্ষেতে পুলিশরাও ছুটে গিয়েছিলেন। কৃষকরা ক্ষতিপুরণ পরিমাণ পাবে বলে তারা বিশ্বাস পাচ্ছিল না। তাই সবাইকে নিয়ে একটি সমাধানের চেষ্টা করছি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকরা দিশেহারার মতো হতাশা ও আতঙ্কে পৌষের ঠাণ্ডার মধ্যে প্রশাসন ও ডিলারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তারা আদৌও ক্ষতিপূরণ পাবেন কী না তা এখনো কেউ নিশ্চিত নন।
আপনার মতামত জানানঃ