কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে পাঁচজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। গত বুধবার রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের তুলে নেওয়া হয় বলে পরিবারগুলো অভিযোগ করেছিলেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে দুটি পরিবারের পক্ষ থেকে কুমারখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। তবে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ওই পাঁচজনের কারও খোঁজ মেলেনি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম তখন জানিয়েছিলেন, ‘দুটি জিডির বিষয়ে ওসি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু ডিবি পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ খোঁজাখুঁজি করছে।
নিখোঁজ মোস্তফা রাশেদের শ্যালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে বাড়ি থেকে প্রশাসনের লোকজন পরিচয়ে মোস্তফাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় গিয়ে তার কোনো খোঁজ পাইনি। জিডি করা হয়েছে।’
নিখোঁজের দুই দিন পর আজ শনিবার বেলা ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কার্যালয়ে তাদের দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার কুমারখালী থানায় প্রতারণার অভিযোগে হওয়া একটি মামলার আট আসামিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে র্যাব। তাদের মধ্যে নিখোঁজ পাঁচজনকে দেখা যায়।
গতকাল রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আইয়ুব আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে তার স্বজন ও বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য তারেক আজিজ বলেন, কুমারখালী থানায় খোঁজ নিয়েও কিছু জানতে পারেননি তিনি। জিডির প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় আগের কোনো অভিযোগ নেই।
এদিকে নিখোঁজের দুই দিন পর আজ শনিবার বেলা ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কার্যালয়ে তাদের দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার কুমারখালী থানায় প্রতারণার অভিযোগে হওয়া একটি মামলার আট আসামিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে র্যাব। তাদের মধ্যে নিখোঁজ পাঁচজনকে দেখা যায়।
গতকাল দিবাগত রাত ১১টার পর কুষ্টিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব দাবি করেছে।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) কর্মকর্তা। প্রতারণার মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আজ বেলা ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করেন ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমারখালী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের মো. আবদুল জলিলের ছেলে মো. হাসান আলী (২৮), মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজেদ আলীর ছেলে আবদুল হান্নান (৪৩), ওয়াসী গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে ও শহীদ নগর শৈলকুপা মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), বাঁশগ্রাম গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে ও বাঁশগ্রাম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আইয়ুব আলী (২৮) এবং বহলবাড়িয়া গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে ও লক্ষ্মীপুর মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মসজিদভিত্তিক শিশুশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক হাফিজুর রহমান (২৮)।
এই পাঁচজনকে বুধবার রাতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়।
তবে র্যাব বলছে, পাঁচজনই প্রতারক চক্রের সদস্য। গতকাল রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই পাঁচজনের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে এসবিএসএল কোম্পানির চেয়ারম্যান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চরআউশিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৯), ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহেশপুর উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে মহসীন আলী (৩১) এবং পরিচালক (অর্থ) কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার গোবরা গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া র্যাবের এভাবে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া অমানবিক ও দেশের আইনবিরোধী। কেউ অপরাধ করে থাকলে দেশে আইন আছে, প্রক্রিয়া আছে, সেসবের গুরুত্ব না দিয়ে র্যাবের এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং অস্বীকার করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো, আইনসিদ্ধ ব্যাপার হতে পারে না।
অবশ্য র্যাবের এই চরিত্র নতুন নয় বলেও জানান তারা। আটক করে নিজেদের সুবিধামতো গ্রেপ্তার দেখানো ও গুম করে ফেলা কিংবা ক্রসফায়ারে দেওয়া, এসবই র্যাবের স্বৈরাচারী আচরণ। গনতান্ত্রিক সভ্য কোনো দেশে যা মোটেও কাম্য হতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৪
আপনার মতামত জানানঃ