গত বুধবার(১৬ই ডিসেম্বর) থেকে জার্মানে দ্বিতীয় দফায় কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শুরুতেই বড়সড় এক ধাক্কা খায় জার্মান। দেশটিতে লকডাউনের প্রথম দিনেই করোনায় মারা যায় ৯৫২ জন৷ জার্মনির রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) এ তথ্য জানিয়েছে ৷ মহামারি শুরু হওয়ার পর এটাই দৈনিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা৷ করোনভাইরাস সমস্যায় এ পর্যন্ত জার্মানিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩,৪২৭৷
দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের শুরুতেই বুধবার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭,৭২৮৷ জার্মানির জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৮৷ প্রতিদিনই সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর জানায় প্রায় ৩০ হাজার সংক্রমণ হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। পরে সংখ্যাটি আরো বাড়ানো হয়।
সংক্রমণের বৃদ্ধির হার দেখে জার্মান প্রশাসন দ্রুত টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী আগামী ২৭ই ডিসেম্বর থেকে জার্মানিতে করোনার গণ টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা হলো, টিকাকরণ শুরু হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। সমীক্ষা বলছে, মাত্র ৪০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতে আগ্রহী। অধিকাংশই দ্রুত টিকা নেওয়ার বিরুদ্ধে। ৪০ শতাংশ টিকাকরণ হলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে না। তার জন্য অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। ৪০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতে উৎসাহী হলেও এখনই তাঁরা তা নিতে চান না। কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখে নিতে চান, টিকায় কোনো সমস্যা আছে কি না। ১০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতেই চান না। এই সমীক্ষাই প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। টিকাকরণ শুরু হলেও জনগণ যদি তা না নেন, তা হলে করোনার সংক্রমণ রোধ করা মুশকিল হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা যত বাড়বে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনাও তত বাড়তে পারে।
জার্মানির গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য এবং ডাক্তার ইয়ানোশ ডাহমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘জার্মানির করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বর্তমানে সত্যিই চাপের মধ্যে রয়েছে৷ করোনার প্রথম ঢেউ জার্মানি সাফল্যের সাথে কাটিয়ে উঠেছিল৷”
করোনা সংকট মোকাবেলা করে স্বাভাবিকতায় ফিরে যেতে ভ্যাকসিনকেই একমাত্র উপায় বলে তিনি মনে করেন৷ তবে লোকজনের মাঝে করোনার টিকা নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে উদ্বেগও দেখা দিয়েছে।
প্রথম লকডাউনে জার্মানদের মধ্যে প্যানিক দেখা গেলেও দ্বিতীয় লকডাউনে তেমন কোনো উৎকণ্ঠা নেই।লোকজন আগের মতোই স্বাভাবিক চলছে। দোকানপাটে মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বেশি। তবে তার জন্য লকডাউনের নিয়ম ভাঙছে না। দোকানে দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে না। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ দোকানে ঢুকছেন। প্রতিটি দোকানেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বেশি মানুষকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
আরকেআই এর হিসেব অনুযায়ী সারা জার্মনিতে গড়ে গত সাত দিনে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৯ দশমিক ৮ এবং স্যাকসনির মতো কয়েকটি রাজ্যে এই হার আরো অনেক বেশি৷ এখন সরকারের লক্ষ্য এই হার কমিয়ে ৫০-এ আনা। কিন্তু লোকজনের করোনা টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানানো প্রশাসনের বড় উদ্বেগেরে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অ্যামেরিকায় অবশ্য টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। জার্মানীর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশেও একসাথে গণ টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। খবর : রয়টার, ডিডব্লিউ
আপনার মতামত জানানঃ